ভাষা নিয়ে দিনভর হইহই উৎসব

উৎসব শুরুর নির্ধারিত সময় সকাল নয়টার আগেই অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষার্থীদের ভিড়। দিনভর ভাষা উৎসবে পরীক্ষা, প্রশ্নোত্তর, বানান প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ছিল শিক্ষার্থীরা। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ ২০১৭-এর ঢাকা আঞ্চলিক উৎসব। সহযোগিতায় ছিল গণসাক্ষরতা অভিযান। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল মান্নান ভূঁইয়া উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আর ভাষা প্রতিযোগের পতাকা তোলেন উৎসবের প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেকে যখন মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়, তখন হতাশ হই। প্রথম আলোর বর্ণমালা, ভাষা প্রতিযোগের মতো আয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুপথে, প্রগতির পথে, সংস্কৃতির পথে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। এটা দেখে আনন্দ পাই।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, ‘গোল্ডেন প্লাস আর প্লাটিনাম প্লাস যা-ই পাও না কেন, ভালো মানুষ না হলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। ভালো মানুষ প্রগতির পথে যায়, সংস্কৃতিমান হয়।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মামুন-অর-রশিদ, এইচএসবিসির হেড অব লিগ্যাল ও রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স সাউলী কামাল খান, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পর্বটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও ভাষা প্রতিযোগ ২০১৭-এর সমন্বয়ক অরুণ বসু। উদ্বোধনের পরই শুরু হয় পরীক্ষার পালা। প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার বিভাগে খুদে ভাষাবিদেরা ভাষার লড়াইয়ে মেতে ওঠে। আর প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে অতিথিদের। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা বেগম, কবি সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, মামুন-অর-রশিদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাহেল রাজীব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন শ্রীনগর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কুদরত-ই-হুদা। এ সময় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও শিশুশ্রম বন্ধ করতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। কবির বকুলের লেখা এবং হৃদয় খানের সুরে গাওয়া ভাষা প্রতিযোগের মর্ম সংগীত (থিম সং) বাজানো হয়। গানটি গেয়েছেন হৃদয় খান, ঐশী, মেহেদি ও লুই পা। প্রশ্নোত্তর পর্বের বিরতিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, ভাষা একটি চলমান বিষয়। ভাষার জানালা-দরজা খোলা রাখতে হবে।
একটি ভাষার মধ্যে নানা ভাষার শব্দ যুক্ত হয়ে সেই ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। ভাষার প্রশ্নে রক্ষণশীল মনোভাব বর্জন করতে হবে। এইচএসবিসি আর প্রথম আলোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটা চালু রাখতে হবে। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় ‘বানানবীর’ নামের মজার প্রতিযোগিতা। এটি পরিচালনা করেন মামুন-অর-রশিদ। এ প্রতিযোগিতায় ‘বানানবীর’ হয়েছে হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়া তাবাসসুম। এই পর্বের প্রথম পাঁচজনের হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। এরপর মঞ্চে আসেন উপস্থাপক ও আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। অভিনয়, উপস্থাপনা নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। নাবিলা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী হতে বলেন। বিকেলে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন তিন ভাইবোন—স্বাগতা, সন্ধি ও সভ্যতা। দিনভর উৎসবের শেষে ছিল পুরস্কার দেওয়ার পালা। চার গ্রুপের ৮৪ জন বিজয়ীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। আঞ্চলিক এই প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরা হয়েছে নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল মুকিত। এই পর্বের সঞ্চালক ছিলেন প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক কবি জাফর আহমদ রাশেদ। আঞ্চলিক উৎসবে ঢাকা নগর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ীরা এ মাসের ১৯ তারিখে অনুষ্ঠেয় ভাষা প্রতিযোগের জাতীয় পর্যায়ের উৎসবে অংশ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.