ব্যাংকে সরকারি দপ্তরের জমা পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

ব্যাংক খাতে সরকারি দপ্তরগুলোর আমানতের পরিমাণ এখন পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা। বিভিন্ন মেয়াদের স্থায়ী আমানত (এফডিআর), সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবে এই টাকা জমা আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে গত মার্চ মাসে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাব বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। দপ্তরগুলোর আমানতকে ঢাকা ও মফস্বল—এ দুটি ভাগে ভাগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবরণীটি তৈরি করেছে। দপ্তরগুলোর মধ্যে কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, করপোরেশন, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কত টাকা কোন ব্যাংকে জমা আছে, বিবরণীতে তা তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকায় জমা আছে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। আর ঢাকা ছাড়া সারা দেশে জমা আছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বেশি টাকা জমা আছে সোনালী ব্যাংকে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে এগিয়ে এবি ব্যাংক। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশি আমানত আছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১ লাখ ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা জমা আছে সরকারি করপোরেশনগুলোর। স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জমা টাকার পরিমাণ ৩১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বাকি আমানত অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।
বেশি আমানত সোনালী ব্যাংকে
সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংকে সরকারি দপ্তরগুলোর টাকা জমা আছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ৩২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা জমা আছে সোনালী ব্যাংকে, আর সবচেয়ে কম ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা আছে বিডিবিএলে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সুদের হারের তথ্যে দেখা যায়, এসব আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ দেয় ৪ দশমিক ৯১ থেকে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সোনালী ব্যাংক সুদ দেয় ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম বোর্ড থেকে শুরু করে সব শিক্ষা বোর্ডই টাকা জমা রাখে সোনালী ব্যাংকে। তাদের দ্বিতীয় পছন্দের ব্যাংক অগ্রণী ও তৃতীয় পছন্দের ব্যাংক জনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা রাখার পছন্দের ব্যাংকও এ তিনটি। বেসিক ব্যাংকেও সরকারি দপ্তরের টাকা জমা আছে ১০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকে টাকা রাখা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—এনবিআর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পাট অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ইত্যাদি সংস্থা।
শীর্ষ ১০-এ নতুন ব্যাংক!
নতুন ৯টিসহ বেসরকারি ৩৮ ব্যাংকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের জমা আছে ৫৫ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ আমানত পাওয়া ব্যাংকের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। ২০১৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা নতুন নয়টি ব্যাংকে সরকারি দপ্তরগুলোর আমানত জমা রয়েছে ৮ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক একাই আমানত পেয়েছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। বেসরকারি সব ব্যাংকের মধ্যে ৭ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে এবি ব্যাংকে। আর সবচেয়ে কম ২০১ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক। অন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ৬ হাজার ৩৯৩ কোটি, ইউসিবিএল ৪ হাজার ৫০৪ কোটি এবং আইএফআইসি ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে।
বিদেশি ব্যাংকে আমানত কম
বিদেশি ৯টি ব্যাংকে ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা সরকারি দপ্তরগুলোর আমানত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা আমানত রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে, যা সব বিদেশি ব্যাংকের অর্ধেকেরও বেশি। ওরি ব্যাংকে সরকারি দপ্তরের কোনো আমানত নেই। আর সবচেয়ে কম ৩ কোটি টাকা আমানত রয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায়। আমানতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সুদের হার বরাবরই কম। যেমন: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সুদ দেয় ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। সিটিব্যাংক এনএ সুদ দেয় নামমাত্র শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে সরকারি দপ্তরগুলোর জমা আছে ৯ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) আছে ৭ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব)।

No comments

Powered by Blogger.