যুদ্ধের আশংকা কতটুকু

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির ফলে সামরিক দিক থেকে শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রণহুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন আর জবাবে উত্তর কোরিয়া বলছে, উসকানি অব্যাহত রাখলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু হামলা চালাবে। দুটি দেশের এই বাকযুদ্ধে মনে হচ্ছে বিশ্ব বুঝি আরেকটি ভয়ংকর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক। পরমাণু নীতি বিশেষজ্ঞ এবং সিডনি ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিসের অনারারি অধ্যাপক পিটার হায়েস অস্ট্রেলিয়ার নিউজ ডটকমকে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা তিনি করছেন না। তিনি বলেন, এটা সত্য যে উত্তর কোরিয়া পরমাণু সক্ষমতা প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে এবং ভূগর্ভে পাঁচ দফায় পরমাণু ডিভাইস পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে গত বছরই করেছে দু’বার। পিটার বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমি বলব যে যুদ্ধের ঝুঁকি যথেষ্ট নিচুতে। হ্যাঁ, ভুলের সম্ভাবনা, বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব অথবা ভুল বোঝাবুঝির কারণে আশঙ্কাটা বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ব্যাপক ঝু্কির কারণে যুদ্ধের সামান্য সম্ভাবনাও বেশ উদ্বেগের। পিটার বলেন, উত্তর কোরিয়ার হয়তো ব্যবহার উপযোগী পরমাণু অস্ত্র ও নির্ভরযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নেই। তবে তার আছে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। তিনি বলেন, ‘তারা নিশ্চিতভাবেই স্থল ও সমুদ্রভিত্তিক (সাবমেরিন থেকে ব্যবহারোপযোগী) ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য তাড়াহুড়া করছে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি এবং দক্ষিণ কোরীয় বাহিনী এবং জাপানে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে পরমাণু হামলার মতো মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পেতে পারে। পিটার বলেন, উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত উন্মত্ততা রয়েছে। তবে এটা বিশ্বাস করা যায় না যে দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
পিটার বলেন, বাস্তবে যুদ্ধ করতে হলে শুধু একটি বিমানবাহী রণতরী বানানোই যথেষ্ট হবে না, প্রয়োজন হবে নৌ ও স্থলবাহিনীর। তবে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে নীতি ছিল উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে কৌশলগত ধৈর্যধারণ। কিন্তু ট্রাম্পের কৌশল কী তা এখনও অজ্ঞাত। সিডনি ইউনিভার্সিটির ইউনাইটেড স্টেটস স্টাডিস সেন্টারের রিসার্চ ফেলো ব্রেনডান টমাস-নুনে বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির গতি দেখে অনেক বিশ্লেষকই হতবাক। তিনি বলেন, ক্ষমতাধর রকেট ইঞ্জিন থেকে কারিগরি উৎকর্ষ- প্রতিটি ক্ষেত্রেই উত্তর কোরিয়া উন্নতি সাধন করেছে। বোঝাই যাচ্ছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও যথেষ্ট ছিল না। নুনে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়ার আরও কতদিন লাগবে তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এখন একমত যে এটার জন্য বড়জোর দুই বছর লাগতে পারে।’ অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) মালিকানা এখন বিচ্ছিন্ন দেশটির হাতে। নুনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ভালো কোনো সামরিক পছন্দ নেই। আর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ভুল হিসাব। তিনি বলেন, ‘এখন ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের মতো নেতা। তারা নিজেদের যথেষ্ট সাহসী মনে করেন। ট্রাম্প যেভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকালেই গুলি করে ভূপাতিত করবেন। এটা করা হলে সামরিক উত্তেজনা বাড়বে। এটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াবে এবং তা এই অঞ্চলের বাইরেও বিস্তৃত হবে কিনা তা নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন।’ নিউজ ডটকমডট এইউ থেকে ভাষান্তর ইলিয়াস হোসেন

No comments

Powered by Blogger.