সিরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরী পাঠাল রাশিয়া

সিরিয়ার সরকারি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকার ও তার মিত্র রাশিয়া। আসাদের কার্যালয় থেকে এ হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরী পাঠিয়েছে রাশিয়া। শনিবার কৃষ্ণসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর উপকূলে এ রণতরী পাঠানো হয়েছে বলে জানায় রুশ সংবাদমাধ্যম ‘তাস’। এদিকে সিরিয়ায় শুক্রবারের মার্কিন হামলার ঘটনায় ২০টি বিমান ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পেন্টাগন। আর এ হামলার ফলে সৃষ্ট ‘যুদ্ধে’ পাঁচ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছিলেন, তারা মার্কিন হামলার ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। ফলে সিরিয়ার অভ্যন্তরে রুশ-মার্কিন যুদ্ধের আপাত কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু রুশ রণতরী পাঠানোর পর এ নিয়ে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ভোরে দুই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস পোর্টার ও ইউএসএস রস থেকে আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। সিরীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ অন্তত ছয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ নামের কৃষ্ণ সাগরের বহরে থাকা একটি রুশ রণতরী ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হয়েছে।
সিরিয়ার বন্দরনগরী তারতুসে থাকবে এ রণতরী। ‘তাস’ জানায়, রুশ যুদ্ধজাহাজে রয়েছে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কালিবার। এটি তারতুস বন্দরে যাবে। চার হাজার টনের যুদ্ধজাহাজটি সিরিয়া উপকূলে কতদিন থাকবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই এটি এক মাসের বেশি সময় সেখানে থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ওই যুদ্ধজাহাজটি কৃষ্ণসাগরে তুর্কি জাহাজের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় অংশ নেয়। এবার এটিকে ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হল। সার্বভৌম রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে পরিচালিত মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলা একটি সার্বভৌম দেশের ওপর আগ্রাসন। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্র সিরীয় সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে মস্কো। সিরীয় ‘যুদ্ধে’ ৫ ভয়াবহ ঝুঁকির আশঙ্কা : শুক্রবার সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, এ হামলার কারণে সিরিয়া ইস্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে ৫টি ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হবে। প্রথমত, পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। এ হামলায় মিত্রদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেটা এই অর্থে যে সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের মনোভাব নিয়ে এত দিন যে ধোঁয়াশা ছিল, তা এবার স্পষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আসাদ পাল্টা পদক্ষেপ নেবে। আগেও এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এ পদক্ষেপের মানে হয়তো এই নয় যে তিনি মার্কিন বাহিনীর ওপর পাল্টা হামলা চালাবেন। তবে সুযোগ পেলেই মার্কিনিদের বিরুদ্ধে তিনি ‘ভাতে মারার, পানিতে মারার’ নীতি প্রয়োগ করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, এ হামলার কারণে ট্রাম্পকে একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়তেই হবে। আর ব্যাপক মাত্রায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সেই বিপদ হবে অনাকাক্সিক্ষত; নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য। তৃতীয়ত, রুশ উপস্থিতি বাড়বে। মার্কিন অভিযানের পর সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া আগের চেয়ে প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নেবে। এরই মধ্যে এ ইস্যুতেই রাশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী করেছে। মার্কিন হামলার সমুচিত জবাবও দিতে পারে রাশিয়া।
চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার মধ্য দিয়ে আসাদ অবশ্য ট্রাম্পের মনোভাব সম্পর্কে একটা ধারণা পেলেন। আসাদ ভেবেছিলেন, সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের হয়তো তেমন মনোযোগ নেই। আর থাকলেও তার মতিগতি বোঝা যাচ্ছিল না। তাই এখন আসাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া আরও সহজ হয়েছে। এছাড়া সিরিয়ার দুঃখ হয়তো আরও প্রলম্বিত হবে। মার্কিন হামলার সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল সিরিয়ার ভাগ্যে আগামী আরও কয়েক বছর একই দুর্দশা লেগে থাকবে। সিরিয়ার ২০ বিমান ধ্বংস : সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২০টি বিমান ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছেন পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা। সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় হোমস প্রদেশের আশ-শাইরাত বিমান ঘাঁটিতে শুক্রবার এ হামলা চালানো হয়। মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ইএসএস রোজ ও ইউএসএস পোর্টার থেকে এ ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রায় ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আমেরিকার ছোড়া মাত্র ২৩টি ক্ষেপণাস্ত্র বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করতে পেরেছে। বাকি ৩৬ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। বিমান ঘাঁটির রানওয়ে এবং ট্যাক্সিওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এছাড়া পার্কিং এলাকায় থাকা সিরীয় বিমানগুলো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে। হামলায় সিরিয়ার ছয়টি মিগ-২৩ বিমান ধ্বংস হওয়ার কথা জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ হামলার কার্যকারিতাকে খুবই খারাপ বলে মন্তব্য করেছে এ মন্ত্রণালয়।

No comments

Powered by Blogger.