ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ তিন বছর বাড়ছে

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ২০১৩ অনুাযায়ী কোনো ব্যাংক পরিচালক এক সাথে দুই মেয়াদে তিন বছর করে ছয় বছর পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। আইনের এ বাধ্যবাধকতায় এখন অনেকেই পরিচালক পদে থাকতে পারছেন না। কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করছেন। কেউবা পর্ষদে ছেলেমেয়েকে বসাচ্ছেন। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হিসেবে আজীবন পরিচালক থাকার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন তারা। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছরের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২০১৩-এর এ বাধ্যবাধকতায় অনেকেই পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারছেন না। ফলে অনেকেই এখন উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ আইনটি সংশোধনের জন্য সরকারের উচ্চ মহলে দেনদরবার করছেন। জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ সর্বশেষ সংশোধিত হয় ২০১৩ সালে। আইনটি কার্যকর হয় ওই বছরের ২২ জুলাই। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৫(ক)(ক) ধারা অনুযায়ী ‘আপাতত : বলবৎ অন্য কোন আইনে অথবা কোন ব্যাংক-কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদের সর্বোচ্চ মেয়াদ হইবে তিন বছর।’ আইনের একই ধারায় উপধারা-২ এ বলা হয়েছে, ‘কোন পরিচালক একাদিক্রমে ২ মেয়াদে পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকিলে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হইবার তারিখ হতে পরবর্তী তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে পুনঃনির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না।’ এ উপধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোনো একটি মেয়াদের আংশিক মেয়াদ পূর্ণ মেয়াদ হিসেবে গণ্য হইবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইনের এ ধারা বাস্তবায়ন করতে যেয়েই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই উচ্চ আদালতে রিট করছেন। কারণ, এ আইন যখন কার্যকর হয় তখন কোনো পরিচালকের প্রথম তিন বছরের মেয়াদ শেষ হতে ২০ দিন বা ১০ দিন বাকি আছে। এ অল্প দিনের জন্যও সংশ্লিষ্ট পরিচালকের এক মেয়াদ অর্থাৎ তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ১০ দিন পরে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হচ্ছে। ফলে মাত্র তিন বছর ১০ দিনেই ওই পরিচালকের দুই মেয়াদ অর্থাৎ ছয় বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইনের এ ধারা কার্যকর ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ফলে অনেকেই আইনের ফাঁদে পরে বাদ পরে যাচ্ছেন পরিচালনা পর্ষদ থেকে। যারা বাদ পড়ছেন তাদের অনেকেই উচ্চ আদালতে রিট করছেন। আবার অনেকেই নিজের কোনো প্রতিনিধি ছেলে বা মেয়েকে দিয়ে পর্ষদে নিজের স্থানে বসিয়ে দিচ্ছেন। একজন পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তের এ প্রতিনিধিকে বলেন, তারা উচ্চ আদালতে রিট করছেন। কারণ তিনি আইনের এ বাধ্যবাধকতায় প্রথম তিন বছরের চার মাস পরিচালক হিসেবে থাকার পর পুরো তিন বছরের মেয়াদ হিসেবে গণ্য হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছর পার করেছেন। অর্থাৎ দুই মেয়াদে ছয় বছরের মধ্যে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তিন বছর চার মাস। এখানেই তাদের আপত্তি। ওই পরিচালক বলেন, তাদের দিয়ে ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরং পর্ষদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। এ কারণে তাদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা থেকে বিরত থাকছেন। একই সাথে আইনটি সংশোধনেরও চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের ১৩ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। ওই সময় তারা আজীবন পরিচালক থাকার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। একই সাথে একই পরিবারের দুইজনের বেশি পরিচালক না থাকার বিধান রহিত করতে বলা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, উদ্যোক্তা পরিচালকদের দাবি পর্সালোচনা করে তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আইনটি সংশোধন ছাড়া কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে এক নীতিমালা দিয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক হতে হলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কোম্পানির কমপক্ষে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ নীতিমালার বিরুদ্ধে পরিচালকেরা উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত থেকেও এসইসির সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় দুই শতাংশ শেয়ার নেই এমন পরিচালকেরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালকের পদ হারিয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.