অভিবাসী বহিষ্কারে মার্কিন বিচার বিভাগের পরিকল্পনা

অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত বহিষ্কারের জন্য দেশটির ১২টি শহরে অতিরিক্ত বিচারক পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাতে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিভিন্ন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার ত্বরান্বিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কতজন বিচারকে কখন মোতায়েন করা হবে তা এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই দুই কর্মকর্তা। যেসব শহরে অভিবাসন বিচারক মোতায়েনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, মিয়ামি, নিউ অরলিন্স, সান ফ্রান্সিসকো, মিনেসোটার বাল্টিমোর ও ব্লুমিংনটন, টেক্সাসের এলপাসো এবং হারলিনজেন, ক্যালিফোরনিয়ার ইম্পেরিয়াল এবং আরিজোনার ওমাহা, নেব্রাস্কা ও ফনিক্স। ব্যাপকহারে বিভিন্ন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসী বসবাস করায় সব শহরকে বাছাই করা হয়েছে বলে জানান দুই কর্মকর্তা। মার্কিন বিচার বিভাগের অভিবাসন রিভিউ বিষয়ক নির্বাহী কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র এসব শহরে অভিবাসন বিচার পুনর্নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তাদের বহিষ্কারের কথা বলেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারে বিচারক নিয়োগ করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে অস্বাভাবিকভাবে বিচার বিভাগ পরিচালিত অভিবাসন আদালতের বিচারকদের রদবদল করতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন মুখপাত্র কোনো পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার আগে তা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন তাতে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা দোষী হোক বা না হোক তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতি থেকে সরে যাওয়া হয়। তার নীতি ছিল, যারা গুরুতর অপরাধের জন্য দণ্ডিত শুধু তাদেরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে। অভিবাসীদের বিষয়ে নীতির এই পরিবর্তনের সমালোচনা করেছে কিছু অধিকার আন্দোলন গ্রুপ। তারা বলছে, এর মাধ্যমে এমন সব অভিবাসীদেরও অস্বচ্ছভাবে টার্গেট করা হয়েছে যারা অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাবেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো হুমকিও হবেন না।
বিচার বিভাগের অভিবাসন রিভিউ বিষয়ক নির্বাহী কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শহরে বাড়তি বিচারক নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা ১৮ হাজার ১৩টি অভিবাসন মামলায় সংশ্লিষ্টদের অর্ধেকেরও বেশি অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত ও দণ্ডিত। এসব মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে দুইশ' জনের বেশি অভিবাসী বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এর মানে হলো অন্যরা হয় অভিযুক্ত হয়নি অথবা তাদের দণ্ড ভোগ করে ফেলেছে। তবে কতজন অভিবাসী দণ্ডিত বা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তা মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়নি। এদিকে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের বিভিন্ন হাজতখানায় অভিবাসন বিচারক পাঠাতে যাচ্ছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এদিকে অভিযুক্ত অভিবাসীদের বহিষ্কারে বিচারক ১২ শহরে বিচারক পাঠানোর ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন সাবেক অভিবাসন বিচারক এবং অভিবাসন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান পল স্কিমডিট। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধারণা করা ঠিক হবে না যে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত সবাই বৈধভাবে অবস্থানের অনুমতি পাবেন না। তাদের পরিকল্পনা দেখে মনে হচ্ছে তারা ধরেই নিয়েছে যে সব অপরাধীকেই ফেরত পাঠাতে হবে, কিন্তু এটি সত্য নয়। এমনকি যারা গুরুতর অপরাধ করেছে তারাও আশ্রয় পেতে পারে বলেও উল্লেখ করে স্কিমডিট।। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় অভিবাসন বিচার ব্যবস্থায় পাঁচ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মামলা ঝুলে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিচারক রদবদলের যে পরিকল্পনা করেছে তাতে এই মামলাজট আরও বেড়ে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.