মিরসরাইয়ে কমছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর

মিরসরাইয়ে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ। গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে ভূ’গর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই সাধারণ নলকূপ থেকে পানি কম উত্তোলন হচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজার থেকে আজমপুর পর্যন্ত প্রায় ১০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এদের মধ্যে আজামপুর বাজারে ৩টি, জোরারগঞ্জ ট্রেক্সটাইলের পাশে ১টি, দেওয়ানপুর ১টি, বিশুমিয়ারহাট ১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রতিটি গভীর নলকূপ মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের পাশে অবস্থিত। নলকূপগুলো বিভিন্ন ধরণের বেড়া দিয়ে ঠেকে রাখা হয়। স্থানীয়রা জানায়, একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন ভোরে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে ড্রামে পানি ভর্তি করে সোডিয়াম কার্বনেট পার অক্সিহাইড্রেট জাতীয় ঔষধ মিশ্রণ করে। পরে পানি ভর্তি ড্রামগুলো মিনি পিক আপে করে মুহুরী প্রজেক্টে উৎপাদিত মাছ তাজা রাখতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মিনি-পিক আপে ২৬টি ড্রাম থাকে। দৈনিক ৭০ থেকে ৮০টি পিক-আপ ভর্তি পানি মুহুরী প্রজেক্ট নিয়ে যাওয়া হয়। পানি ভর্তি প্রতিটি পিক-আপের ওজন হয় প্রায় ১০ টন। যাতে কয়েক হাজার লিটার পানি থাকে। স্থানীয়রা আরো জানায়, রাসায়নিক মিশ্রিত পানি ভর্তি পিক-আপ গুলো যাওয়া সময় সড়ক ভিজে যায়। ফলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। সড়কের উপর স্তরের বিটুমিনের গুনগত মান নষ্ট হয়ে অল্প বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূ’গর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে ১৯৮৬ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে একটি প্রঞ্চাপনের মাধ্যমে সেই অধ্যাদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়। যা ছিল অবৈধ।
১৯৮৬ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি গভীর নলকূপ থেকে আরেকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা যেত ২৫০০ ফুট দূরত্বে। কিন্তু সরকারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অপ ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) এক ভুয়া প্রতিবেদনে সেই দূরত্ব কমিয়ে ১২০০ ফুট করা হয়। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা না করে একটি সিন্ডিকেট জোরারগঞ্জ ও ওসমানুপর ইউনিয়নে যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। ফলে ভূ-গর্ভের পানি স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সাধারণ নলকূপ থেকে পানি কম উত্তোলন হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি কৃষি কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন-১৭ নামে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন মন্ত্রিসভা। সেই আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের লাইন্সেস ছাড়া নলকূপ স্থাপন করা যাবে না। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা কমিটি অনুসন্ধান করে নলকূপ স্থাপনের লাইন্সেস দেবেন। উপজেলা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডাঃ জামশেদ আলম জানান, যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে ভবিষ্যতে উপজেলাবাসী বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়বে। নলকূপের পানি নির্ভর কৃষি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ জানান, গভীর নলকূপের আশে পাশে সাধারণ নলকূপ থাকলে পানি কম উত্তোলন হবে। কারণ গভীর নলকূপের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনুমোদন হওয়া কোন আইনের খসড়া জনস্বাস্থ্য অফিসে সংরক্ষিত নেই। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.