ফুলচাষ যাদের প্রধান পেশা

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ফুলচাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন পাঁচ গ্রামের শতাধিক যুবক। যুবকদের এখন প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুল চাষ। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা যমুনা ও বাঙালি নদীর তীরে অবস্থিত। প্রতি বছর নদী ভাঙছে। নদী যেমন ভাঙ্গে ঠিক তেমনি বাড়ে সর্বস্বান্ত মানুষের সংখ্যা। এই মানুষগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখতে জড়িয়ে পড়ছে কৃষি কাজের সাথে। তাই তারা এবার ফুলচাষ শুরু করেছেন। ফুলচাষ করেই এখন তারা নিজেদের ভাগ্য বদল করে ফেলেছেন। সোনাতলা উপজেলার কামারপাড়া, চামুরপাড়া, সুজায়েতপুর, রাখালগাছি, বড়বালুয়া গ্রামে ব্যাপক আকারে ফুলচাষ হচ্ছে। সোনাতলা উপজেলার চমরগাছা গ্রামের মোন্তেজার রহমান জানান, ফুলচাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তিনি এবার ৫০ শতক জমিতে ফুলের চাষ করেছেন। ওই জমি থেকে এবার প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশা করছেন। একই গ্রামের নূরে আলম শিলু তার ২০ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। একইভাবে সুজাইতপুর গ্রামের শাকিলুজ্জামান তার ৩০ শতক জমিতে গত কয়েক বছর ধরে ফুলচাষ করে ভালো আয় করেছেন। সে আয় দিয়ে নিজের সংসার পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া বামুনিয়া ও নগর পাড়ার অনেক কৃষক ও বেকার যুবক ফুলচাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। কৃষি বিভাগ ও কৃষি কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ফুলচাষিদের গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষ বেশি করতে দেখা গেছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ফুল বিক্রেতারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে ভ্যানে ফুলের চারা ও ফুল বিক্রি করেন। সোনাতলা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের তুহিন মিয়া (২৫) সুখানপুকুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মূল ফটকে ফুল বিক্রিকালে জানান, তাদের অভাবী সংসারে ১০-১১ বছর আগে তার পিতার অকাল মৃত্যু ঘটে। সেই থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। পরিবারে মা ও ছোট দুই বোন। ওরা দুইজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। বাড়ির দুই-তিন শতক জমি ছাড়া জায়গা জমি নেই তার। সারা বছর ফুল বিক্রি করে সংসার চলে। ফুলচাষিরা জানান, ফুল চাষে উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। তাই দিনদিন সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা অন্য ফসলের চেয়ে ফুলচাষে ঝুঁকে পড়েছেন। সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন সরদার জানান, উপজেলায় ফুলচাষির সংখ্যা বাড়ছে। কৃষি অফিস থেকে ফুল চাষিদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষক ফুলের বীজ বপনের তিন মাসের মধ্যে ফুল বিক্রি করতে পারেন। ফুল চাষে উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। তাই দিন দিন কৃষকেরা অন্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। উপজেলার পাঁচটি গ্রামে ব্যাপক আকারে ফুলচাষ হয়ে থাকে। ওই পাঁচ গ্রামের দেখাদেখি অন্যান্য গ্রামেও ফুলচাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

No comments

Powered by Blogger.