জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

দেশবাসীকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। আমরা উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি, যাতে উন্নত শিক্ষা পেতে পারে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দিচ্ছি, যাতে প্রযুক্তি শিক্ষা তারা নিতে পারে। কাজেই সে শিক্ষা নিতে হবে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে বুধবার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে, তখন আওয়ামী লীগ কাজ করে দেশের উন্নয়ন নিয়ে। বিএনপি জঙ্গিবাদ, বাংলাভাই, শায়খ আবদুর রহমান সৃষ্টি করেছিল। তখন বহু নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হয় এদের হাতে। এদের অত্যাচারে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুল হাসান লাবলু অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ৩১ মিনিটে হেলিকপ্টারে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে এসে নামেন। প্রথমে সার্কিট হাউসে ওঠেন।
সেখান থেকে গাড়িতে করে যান বদরপুরে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে। জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজ সারেন। সেখান থেকে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আসেন। জনসভা মঞ্চে ওঠার আগেই তিনি মঞ্চের পাশে ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে মঞ্চে ওঠেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামাতের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তারা কী অত্যাচারই না মানুষের ওপর করেছে। ৫০৮ জন মানুষকে তারা এই ৩ বছরে হত্যা করেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারী পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ওলামা-মাশায়েখ, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনসহ সবার কাছে আমার আহ্বান থাকবে- সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, একটা ছেলেমেয়েও যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের পথে না যায়। কোনো স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ের অনুপস্থিতির হিসাব নিতে হবে। বাবা-মাকে, নিজের ছেলেমেয়ে কার সঙ্গে মেশে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, কার সঙ্গে চলাফেরা করে তা খেয়াল রাখতে হবে। নিরীহ মানুষকে হত্যা করা আর আত্মহননের পথ বেছে নেয়া কখনও ইসলাম সমর্থন করে না। ফরিদপুরবাসীর কাছে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ এলাকায় যখনই আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন তখনই আপনাদের উন্নতি হয়েছে। কাজেই আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই- আগামী নির্বাচন সামনে, ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে। ... সেই নির্বাচনে আমাদের উন্নয়নের কাজ যেন অব্যাহত রাখতে পারি তার জন্য নৌকা মার্কায় আপনাদের ভোট চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ ঢাকা বিভাগ ভেঙে আমরা নতুন আরেকটা বিভাগ করব। ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ নিয়ে আরেকটি বিভাগ আমরা করব- সেই পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে সরকার নতুন নতুন বিভাগ করে দিচ্ছে। জনগণ যাতে বেশি সেবা পায়, যাতে আরও বেশি কাজ পায় সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’ দক্ষিণাঞ্চল এবং পদ্মাপারের মানুষ চিরদিন অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা জনসভায় সভাপতিত্ব করেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান সভা পরিচালনা করেন। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন নাসিম প্রমুখ। সভায় প্রধানমন্ত্রীর জামাতা খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতুকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ফরিদপুর জেলা শহর ও সমাবেশস্থল উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে পুরো শহর। চৈত্রের প্রচণ্ড দাবদাহ অগ্রাহ্য করে দুপুরের পরপরই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য সব বয়সী মানুষকে রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদ বা উঁচু স্থাপনার ওপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পল্লীকবি জসিমউদ্দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, শিশু একাডেমি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ফরিদপুর, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, কুমার নদীর ওপর ৯৬ মিটার ব্রিজ, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ফরিদপুর, ৩৩/১১ কেভি হারুকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুমার নদ পুনর্খনন প্রকল্প, পুলিশ হাসপাতাল, রাজেন্দ্র কলেজছাত্রী নিবাস, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ৫টা ১০ মিনিটে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এইডস, যক্ষা ও ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা : বাসস জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ থেকে এইচআইভি/এইডস, যক্ষা ও ম্যালেরিয়া- এ ৩টি প্রধান ব্যাধি নির্মূলে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার সকালে গণভবনে সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এ আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

No comments

Powered by Blogger.