খাদিজা ফিরেছেন, ফিরেছে পরিবারে হাসি

আদরের মেয়ে খাদিজার ওপর হামলার পর তাঁর মা মনোয়ারা বেগম বলেছিলেন, ‘ময়না (খাদিজা) কইছল পরীক্ষা থাকি আইয়া ভাত খাইব। আর তো আইল না। ময়না না ফিরলে আমিও আর ভাত খাইতাম না।’ সুস্থ হয়ে গতকাল শুক্রবার মায়ের কোলে ফিরেছেন সেই ময়না। খাদিজাকে ছাড়া আর ভাত খেতে না চাওয়ার কথা গতকাল মনে করিয়ে দিতেই চোখ ছলছল করে ওঠে মা মনোয়ারা বেগমের। তবে ছিলেন হাসিমুখে। পাশ থেকে খাদিজার দাদি আলতাফুন নেছা বললেন, ‘নাতিন ফিরছে; বাড়ির হাসিও ফিরছে। সকলের দোয়া কবুল অইছে!’ সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসা শেষে প্রায় তিন মাস পর গতকাল সকালে বাড়ি ফিরেছেন সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম। তাঁকে কাছে পেয়ে প্রাণ ফিরেছে তাঁর পরিবারে। আনন্দ গ্রামবাসীর চোখেমুখেও। সিআরপি ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টায় সিআরপির একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে খাদিজাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বড় ভাই শাহীন আহমেদ। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাঁরা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছান। শাহীন আহমেদ বলেন, ওসমানী বিমানবন্দর থেকে পুলিশ প্রহরায় মাইক্রোবাসে করে তাঁরা বেলা দুইটার দিকে নিজ বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার হাউসা গ্রামে পৌঁছান। খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, খাদিজা বাড়ি ফেরায় সবাই খুশি। আর কোনো খাদিজা যেন নৃশংসতার শিকার না হন, এমনটাই চাওয়া তাঁদের।
খাদিজার ওপর হামলাকারী বদরুল আলমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী তিনি। খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া বলেন, ‘খাদিজা বাড়িতে ফিরে আত্মীয়স্বজনসহ সবার সঙ্গে অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছে। এখন মেয়েটার দিকে চাইলে সকল কষ্ট ভুলে যাই।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাদিজা বলেন, ‘আমি ভালো আছি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।’ তাঁকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কাল রোববার আদালতে সাক্ষ্য দেবেন বলে জানালেন খাদিজা। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বদরুলের শাস্তি চাই। আমি আদালতে যাব।’ গত বৃহস্পতিবার সিআরপি কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, খাদিজা এখন প্রায় সুস্থ। আবার পড়াশোনা শুরু করতে পারবেন। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও কয়েক বছর চিকিৎসা নিতে হবে। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা গত বছর ৩ অক্টোবর বিকেলে এমসি কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে বিএ (পাস) পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার সময় তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম।

No comments

Powered by Blogger.