দেশে ৬৩ লাখের বেশি মানুষ বিষাদে ভুগছে

দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪ জনের বেশি মানুষ বিষাদগ্রস্ত। বেকারত্ব, মানসিক ধাক্কা, বঞ্চনা বা মৃত্যুজনিত শোকের মতো অভিজ্ঞতা এই মানসিক রোগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘ডিপ্রেশন অ্যান্ড আদার কমন মেন্টাল ডিজঅর্ডার্স: গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেট’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ৬৩ লাখ ৯১ হাজারের বেশি মানুষ বিষাদগ্রস্ততায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে ৬৯ লাখ মানুষ, মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলভুক্ত।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় বিষাদগ্রস্ত মানুষের হার সমান হলেও ভুটানে তা বেশি, ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিষাদগ্রস্ত মানুষের দেশ ভারত, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পূর্ব তিমুরে, ৩ শতাংশ। বিশ্বে সবচেয়ে কম বিষাদগ্রস্ত মানুষের দেশ সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি ইউক্রেনে, ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৯৯০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিশ্বের বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাদের নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে বিষাদগ্রস্ততা একটি সাধারণ রোগ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছে। প্রতিবন্ধিতার একটি প্রধান কারণ বিষাদগ্রস্ততা। পুরুষের তুলনায় নারী এই মানসিক রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, বিষাদগ্রস্ততার একেবারে শেষ স্তরে গিয়ে অনেক মানুষই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিষাদগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতা আছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক মোহিত কামালের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আর্থসামাজিক কারণে মানুষ বিষাদগ্রস্ত হয়। অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা মানুষকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। কিছু ক্ষেত্রে এর জন্য জিন বা বংশগতি দায়ী।
অর্থাৎ মা-বাবা এই রোগে ভুগলে সন্তানেরও তাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিভিন্ন ধরনের রোগী দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মোহিত কামাল বলেন, অবহেলার শিকার বা স্বামী থেকে বঞ্চনা পাওয়া নারী বিষাদে ভোগে। অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়া বিষাদের কারণ হয়। পরীক্ষা বা লেখাপড়ায় ভালো না করার কারণে তরুণেরা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। যারা বেশি টেলিভিশন দেখে বা ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেই কিশোরদের মধ্যেও বিষাদগ্রস্ততা দেখা যাচ্ছে। ‘এর লক্ষণ কী’—এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহিত কামাল বলেন, বিষাদগ্রস্ত মানুষের কোনো কিছুতে আনন্দ থাকে না। এরা কাজের উদ্দীপনা পায় না। এদের কাছে বর্তমান গ্লানিময় মনে হয়। আর ভবিষ্যৎকে মনে হয় অন্ধকার। অনেক বিষাদগ্রস্ত মানুষের বিশেষ করে নারীদের শরীরে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষাদগ্রস্ত রোগের কার্যকর চিকিৎসায় সদস্যদেশগুলোকে নানা ধরনের সহায়তা দেয়। মোহিত কামাল আরও বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারের উচিত মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলা।

No comments

Powered by Blogger.