রোহিঙ্গা শিবিরে ঠাঁই হচ্ছে না জাহেদার

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জঙ্গলঘেরা গ্রাম বালুখালী। এই গ্রামের প্রায় ২০০ একর বনভূমি দখল করে তৈরি হয়েছে ‘বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির’। এখানে থাকছে দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এই শিবিরের প্রবেশমুখে মাটিতে বসে কাঁদছিলেন রাখাইন রাজ্যের পোয়াংখালী গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী জাহেদা বেগম (২৬)। তাঁর কোলে শিশু মুনিয়া। পাশে বসে ছিল তিন বছর বয়সী আরেক শিশু পারভেজ। সন্তানদের খাবারের জন্য জাহেদা পথচারীদের কাছ থেকে সাহায্য চাচ্ছিলেন। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে পোয়াংখালী গ্রামটি ঘিরে গুলি করতে থাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
সেনাসদস্যরা তাঁর স্বামী জাহেদ আলমকে (৩৪) ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর দুই ছেলে জানে আলম (১১) ও ছৈয়দুল আমিন (৯) বাবাকে রক্ষার চেষ্টায় এগিয়ে গেলে দুজনকেই গুলি করে সেনারা। দুই ছেলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর সেনারা তাঁর স্বামীকেও হত্যা করে। তখন তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জাহেদার ভাষ্য, ওই ঘটনার পর তিনি পারভেজকে নিয়ে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। পরদিন অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তিনি নৌকায় টেকনাফের কাঞ্জরপাড়ায় পালিয়ে আসেন। রাস্তার পাশে তাঁকে কাঁদতে দেখে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার আয়ুব নামের এক ব্যক্তি বাড়িতে আশ্রয় দেন। ওই বাড়িতে জন্ম হয় মেয়ে মুনিয়ার। ৬৮ দিন ওই বাড়িতে ছিলেন। মালয়েশিয়ার জাহাজে আনা ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে গতকাল সকালে তিনি ছুটে আসেন বালুখালীর রোহিঙ্গা শিবিরে। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিবিরের কেউ তাঁকে জায়গা দেয়নি। দুই শিশু নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। জাহেদার মতো আরও কয়েকজন গতকাল দুপুরে বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন। তাঁদের কেউ শিবিরের পাশের গাছতলায় কেউবা রাস্তার ধারে বসে ছিলেন। কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা পুরুষ তাঁদের শিবিরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ১ নম্বর ব্লকের মাঝি (নেতা) মোহাম্মদ খলিল বলেন, ডিসেম্বর মাসে বালুখালী পাহাড়ে এই শিবির গড়ে ওঠে। জানুয়ারিতে এই শিবিরে রোহিঙ্গা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। এখন সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মালয়েশিয়া জাহাজে আনা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের খবর শুনে রোহিঙ্গা শিবিরে ছুটে আসছেন। কিন্তু শিবিরে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
মোহাম্মদ খলিল বলেন, এই শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের অনেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার। কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউবা স্ত্রী, কেউবা ছেলেমেয়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি বালুখালী শিবির পরিদর্শন করেন। তাঁকে তাঁরা বলেছেন, নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হলে এই শিবিরের সব রোহিঙ্গা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার জেলার সমন্বয়কারী সৈকত বিশ্বাস বলেন, আজ শনিবার তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় উখিয়া ও টেকনাফের দুটি অনিবন্ধিত শিবিরের ৬০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, দুই উপজেলার তিনটি শিবিরে নতুন আসা প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণ পাবে।

No comments

Powered by Blogger.