পিলখানা ট্র্যাজেডি- ৮ বছরেও স্থায়ী পুনর্বাসন হয়নি শহীদ নূরুল ইসলামের পরিবারের



তৎকালীন বিডিআর-এর কেন্দ্রিয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে বিডিআর সদস্যদের মধ্যে একমাত্র তার ভূমিকা ছিল ব্যতিক্রম। বিপথগামী সদস্যরা নৃশংসভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে। সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। বিদ্রোহীদের হাত থেকে সেনা  কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে জীবন দিয়েছেন। ঘাতকের বুলেটে তিনিও শহীদ হন। সরকার তার সেই বীরত্বের স্বীকৃতিও দিয়েছে। পিলখানার শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা তার পরিবারও পেয়েছে। কিন্তু ৮ বছরেও পায়নি স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধা। এই সুবিধা আদায় করতে বছরের পর বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেনও। তবে নানা জটিলতায় এখনো প্লট বরাদ্দ পাননি তারা। এতে এই শহীদের স্ত্রী চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নুরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
পিলখানায় ট্র্র্যাজেডিতে ৫৮ বীর সৈনিক শাহাদাৎ বরণ করেন। তার মধ্যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা আর ১ জন হলেন বিডিআরের সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। তিনি বিডিআর সদর দপ্তরে নিয়োজিত ছিলেন। শহীদ নুরুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিচল আস্থা, প্রশ্নাতীত আনুগত্য এবং অতি সৈনিকসুলভ আচরণ প্রদর্শনপূর্বক অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বিদ্রোহীদের বর্বরোচিত কাজে বাধা প্রদান করেন তার স্বামী। ফলে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাকেও বিদ্রোহীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবরে নিক্ষেপ করে। তার সাহসিকতায় বিজিবি তাকে বর্ডার গার্ড পদকে ভূষিত করেন। কর্মজীবনে তিনি চার বার ডিজি পদক পেয়েছিলেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সরকার তাকে পবিত্র হজও পালন করান। পারিবারিক সূত্র জানায়, তিনি একজন সৎ অফিসার ছিলেন। তার পরিবার দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি চার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কোনো অর্থ সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। এতে তার স্ত্রী আয়েশা বেগম সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। আয়েশা বেগম দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এখন আর কেউ নেই।
বিডিআর বিদ্রোহের শহীদ পরিবার হিসাবে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছে নুরুলের পরিবার। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তার পরিবার স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধা পায়নি।
ওই বিদ্রোহে ৫৭ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় বিনা খরচে সরকারের পক্ষ হতে ৪৭ শহীদ পরিবারকে মিরপুর ডিওএইচএস হতে ৪ কাঠার প্লট এবং ১০ শহীদ পরিবারকে মিরপুর ডিওএইচএস হতে ২টি করে ফ্ল্যাট দেয়া হয়। কিন্তু শুধু নূরুল ইসলামের পরিবার পুনর্বাসন সুবিধা পায়নি। এ ব্যাপারে নুরুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.