সড়কে এক মাস ধরে পানি

শুষ্ক মৌসুম, বৃষ্টি নেই। কিন্তু রাজধানীর খিলক্ষেত মধ্যপাড়া সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়কে পানির পরিমাণ প্রায় হাঁটুসমান। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি আটকে আছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পয়োনিষ্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উঠে আসছে সেখান থেকেই। পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অনেকের বাসাবাড়িতে পর্যন্ত পানি উঠে গেছে, শৌচাগার দিয়ে ভেতরে আসছে ময়লা পানি। ওয়াসার পানিতেও পাওয়া যাচ্ছে সেই পচা পানির গন্ধ। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদ-ই-বাইতুন নূরের সামনের মোড় থেকে কামালের বাড়ির মোড়ে র‍্যাবের বাড়ির সামনে পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক জলাবদ্ধ। মসজিদের সামনে থেকে মাস্টার কোচিং সেন্টারের সামনে পর্যন্ত ফেলা হয়েছে ইট ও বালুর বস্তা। রিকশা ছাড়া হেঁটে চলার কোনো উপায় নেই। অনেকেই আবার চলাফেরা করছেন গামবুট (বর্ষাকালীন বড় জুতা) পায়ে। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, খিলক্ষেত মধ্যপাড়ার পানি ও পয়োনিষ্কাশন লাইনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। ছয়-সাত মাস আগে থেকেই ম্যানহোলের মুখ দিয়ে পচা পানি বের হতো। ব্যবহৃত পানি সারা দিন এভাবে রাস্তায় জমে থাকত, তবে রাতে চলে যেত। কিন্তু রাস্তাটির সংস্কারকাজ শুরুর পর থেকে প্রায় ১৫ দিন ধরে রাস্তাটি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। মধ্যপাড়ার হাজি মো. লালমিয়ার বাড়ির বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, বাসার ভেতর, রান্নাঘরে, টয়লেটে—সব জায়গাতেই পানি। ওয়াসার পানিতেও আসছে গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। তিনি বলেন, ‘সারা দিন কিছু করতে পারি না। বাচ্চারাও বাসার বাইরে যেতে পারছে না।’ স্বপ্ন জেনারেল স্টোরের লাবণী বিশ্বাস বলেন,
তিন বছর আগে রাস্তার ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। তখন একসঙ্গে পয়োনিষ্কাশন নালার কাজও করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরে অনেক সময় ওয়াসা, তিতাস, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে নিজেদের প্রয়োজনমতো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে। তাই অল্প দিনের মধ্যেই পয়োনিষ্কাশন নালা বন্ধ হয়ে যায়। ১০ থেকে ১৫ দিন আগে চান মিয়া নেতার বাড়ির সামনে থেকে পয়োনিষ্কাশন নালার সংস্কারকাজ শুরু করা হয়। ওই দিন থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা এ সমস্যার মধ্যে আছেন। তবে সংস্কারকাজ এক-তৃতীয়াংশও করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কোচিং শেষে ছাত্রীদের নিরাপদে জলাবদ্ধ অংশটুকু পার করে দিতে পায়ে গামবুট আর হাতে লোহার রডের লাঠি নিয়ে নিজেই ময়লা পানিতে নেমে পড়লেন মাস্টার কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মো. দেলোয়ার। ছাত্রীরা এগোচ্ছিল দেয়াল ঘেঁষে রাস্তায় ফেলে রাখা ইট আর বালুর বস্তার ওপর এক পা, দুই পা করে। পাশ থেকে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। দেলোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন ময়লা পানি মাড়িয়েই স্কুলে যেতে হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহনাজ পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। সেটি এলাকাবাসীকে জানানো আছে এবং তাদেরকে চলাচলের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যাপারীপাড়া সড়ক ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারকাজ চলাকালীন জনদুর্ভোগ এড়াতে ময়লা পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চারটি সেচ মেশিনের সাহায্যে পানি সরানোর কাজ করে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.