আগাম আনারসে সুদিন ফিরেছে চাষিদের

রাঙামাটির কুতুকছড়ি ইউনিয়নের পুদিহালী গ্রামের আনারসচাষি সুপন চাকমা ছয় বছর ধরে আনারস চাষ করেছেন। শুরুর দিকে টানা চার বছর লাভের মুখ দেখেননি। ফলন ভালো হলেও দাম না ওঠায় কেবল চাষের খরচটাই পেতেন। তবে দুই বছর ধরে তাঁর বাগানে আগাম আনারসের ফলন হওয়ায় মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। এতে সুদিন ফিরেছে তাঁর।
কেবল সুপন চাকমা নন, সদর উপজেলার পুদিহালী গ্রামের বহু চাষি আগাম জাতের আনারস ফলিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি লাভ হওয়া জেলার অনেক চাষি এখন আগাম আনারস ফলাচ্ছেন। রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৪ হাজার ৯৮০ একর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় ২ হাজার ৩৮৭ একরে ও সদর উপজেলায় ১ হাজার ৬৪৫ একর জমিতে আনারসের চাষ করেছেন চাষিরা। জেলার অন্যান্য উপজেলার আরও ৯৫৭ একর জমিতে আনারসের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে নানিয়ারচর ও সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৬০ একর জামিতে আগাম আনারসের ফলন হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি কুতুকছড়ি বাজার ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির সমতা ঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, চাষিরা বিক্রির জন্য আনারস এনেছেন বাজরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে আনারস কিনে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সরবরাহ করার জন্য ট্রাকে বোঝাই করছেন। প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। রাঙামাটির সমতা ঘাটে আসা আনারস ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম বলেন, প্রতি জোড়া আনারস ২০ থেকে ২৪ টাকা দামে কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন তাঁরা। প্রতি জোড়ায় লাভ থাকছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট, বগাছড়ি, ইসলামপুর এবং রাঙামাটি সদর উপজেলা কুতুকছড়ি ইউনিয়নের হেরেটছড়ি, হাতিমারা ও পুদিহালী এলাকায় আগাম আনারসের চাষ শুরু হয়। শুরুতে ওসব এলাকার ৮ থেকে ১০ জন চাষি হরমোন প্রয়োগ করে আগাম আনারস ফলিয়েছিলেন। তাঁরা সফল হওয়ায় দুই উপজেলায় শতাধিক চাষি আগাম আনারসের চাষ শুরু করেন। আগে এক জোড়া আনারস ভরা মৌসুমে বিক্রি করা হতো আট থেকে দশ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে এক জোড়া ২০ থেকে ২৪ টাকা। আনারসচাষিরা জানান, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে জঙ্গল পরিষ্কার করে পাহাড়গুলো চাষের উপযোগী করেন তাঁরা।
জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করেন তাঁরা। আনারসের ফলন হয় এক বছর পর। কিন্তু আনারসের চারা রোপণের চার থেকে পাঁচ মাস পর হরমোন প্রয়োগ করলে সাত থেকে আট মাসের মধ্যে ফলন আসে। এসব ওষুধ স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের পরামর্শে দেওয়া হয় বলে আনারসচাষিরা জানান। রাঙামাটির ফলবিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, নানিয়ারচর উপজেলা ও রাঙামাটি সদর উপজেলায় আগাম আনারসের চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দিন দিন চাষির সংখ্যা বাড়ছে। অনেক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী আগাম আনারসের খেত কিনে নেন। এ ছাড়া চাষিরা খেত থেকে আনারস তুলে নানিয়ারচর বাজার, ঘিলাছড়ি ও সদর উপজেলায় কুতুকছড়ি, ঘাগড়া এবং রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি, বনরূপা বাজারে বিক্রি করছেন। এখান থেকেও পাইকাররা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনারস সরবরাহ করছেন। পুদিহালী এলাকায় সুপন চাকমা ও বগাছড়ি এলাকায় মো. জমির আলী বলেন, ‘মৌসুমের তিন থেকে চার আগে আনারস হলে দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। এ বছর আমি ১০ হাজার আগাম আনারস বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা পেয়েছি। অথচ মৌসুমে এই পরিমাণ আনারস বিক্রি করে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার পাই।’ রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রমণী কান্তি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, আনারসের আগাম ফলন হলে চাষিরা অনেক লাভবান হন। মৌসুমের চেয়ে এ সময় আনারস দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। আগাম ফলনের জন্য চাষিরা হরমোনজাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করলেও তা ক্ষতিকর নয়। এসব ওষুধ প্রয়োগ করলে তিন থেকে চার মাস আগে ফলন পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা জানান, স্বল্পমাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।

No comments

Powered by Blogger.