নরসিংদীর সড়কে গেল ১১ জনের প্রাণ

নরসিংদীর বেলাবো উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত নয়জন। আজ রোববার সকালে উপজেলার দড়িকান্দি এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, চারজন নারী ও দুজন শিশু। সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিল। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় বলে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন মাইক্রোবাসের আরোহী, তিনজন বাসের আরোহী ও তিনজন পথচারী। তাদের মধ্যে বাস ও মাইক্রোবাসের আরোহীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনজন পথচারীকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাস-মাইক্রোবাসের আরোহী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের ভাষ্য, অগ্রদূত পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি হবিগঞ্জ থেকে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসটি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় যাচ্ছিল। দড়িকান্দি এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ১১ জন আরোহী নিহত হয়। দুর্ঘটনাস্থলে স্বপন মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাইক্রোবাসের নিহত আরোহীরা তাঁর পরিচিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তিনিও ঢাকা থেকে নিকলী ফিরছিলেন। তবে তিনি অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা শ্রমজীবী হিসেবে ঢাকায় কাজ করতেন। তাঁরা অনেক দিন পর বাড়ি ফিরছিলেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, মাইক্রোবাসটিতে ১৪ জন আরোহী ছিলেন। আরোহীদের এই সংখ্যা মাইক্রোবাসের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। আর বাসের সামনের দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। ইতিমধ্যে মহাসড়ক থেকে বাস ও মাইক্রোবাসটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোজাম্মেল হক ও বেলাবো উপজেলার ইউএনও উম্মে সালমা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, নিহত ১১ জনের লাশ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় আনা হয়েছে। বাসের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়েছেন। নরসিংদীর আজকের দুর্ঘটনার আগে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর, গাজীপুর, মাগুরা, নাটোর ও রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয় অনেকে। পুলিশের হিসাবে, গত তিন বছরে গড়ে দুই হাজার মানুষের প্রাণ গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০১৬ সালেই ৪ হাজার ৩১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৬ হাজার ৫৫ জন। আহত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। এর আগের বছর প্রাণহানি হয় আট হাজারের বেশি মানুষের।

No comments

Powered by Blogger.