বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে শেষ হলো উৎসব

গণিতের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে শেষ হলো ১৫তম জাতীয় গণিত উৎসব। নাচ, গান আর গুণীজনদের আলোচনায় গতকাল শনিবার উৎসব ছিল প্রাণবন্ত। আর দিনের মূল আকর্ষণ পুরস্কার প্রদান তো ছিলই। এবারের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৮৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল মাঠে গত শুক্রবার সকালে শুরু হয়েছিল দুই দিনব্যাপী ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৭। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল সকালে নৃত্যরঙের নাচের মধ্য দিয়ে দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শুরু হয় সুডোকু প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব।
শুক্রবারের বাছাইপর্বে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা সুডোকুর চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। এরপর মঞ্চে আসেন অর্থনীতিবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হায়দার খান। তিনি বলেন, গণিত নিয়ে এশিয়ার অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। ভবিষ্যতে গণিত একটি অনুপ্রেরণা হবে। আগে বাংলায় গণিতের পরিভাষা ছিল খটমটে। সেগুলো এখন অনেক সহজ হয়েছে। মঞ্চে আসেন শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। আবেদ চৌধুরী জাফর ইকবালের কাছে জানতে চান, বিজ্ঞান বই থেকে শিখলে ভালো হয়, নাকি প্রকৃতি থেকে? জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের মাত্র ৫ শতাংশ বই থেকে শিখবে আর বাকি ৯৫ শতাংশ শিখতে হবে প্রকৃতি থেকে। এখন সবকিছু পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সেখান থেকে সরে আসতে হবে। ভালো করে কিছু শিখলে জিপিএ-৫ পেছনে পেছনে দৌড়াবে। এরপর গণিত নিয়ে পটগান পরিবেশন করে খুলনার রূপান্তর থিয়েটার। মঞ্চে আসেন গণিতবিদ লুৎফুজ্জামান ও আনোয়ার হোসেন। লুৎফুজ্জামান বলেন, ‘বিশেষ একটি টানে এই গণিত উৎসবে আসি। কিছুক্ষণের জন্য ছোট হয়ে যাই। এই অলিম্পিয়াড সারা দেশে, বিশেষ করে ছোটদের গণিতে উৎসাহিত করছে।’ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, মানুষের মতো মানুষ হতে চাইলে বই পড়তে হবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়তে হবে। রেজাল্ট ভালো করতে হবে। মানুষও হতে হবে। এবার মার্চের প্রথম সপ্তাহে গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০০ জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পে সুযোগ পাবে। এরপর শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এ সময় মঞ্চে ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এহতেশামুল হক খান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিজ্ঞানী জাহিদ হাসান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এনদেল্লাহ, বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক এম এ হাকিম, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার, বিশিষ্ট সমাজকর্মী তাজিমা মজুমদার, সেন্ট যোসেফ স্কুলের শিক্ষক দীপক কুমার সরকার প্রমুখ। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আগের বছরের চেয়ে এবারের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে।
সারা দিন ফেসবুক ব্যবহারের দরকার নেই। এতে মস্তিষ্কের দক্ষতা কমে যাচ্ছে। বারবার গুগল করায় একধরনের ডিজিটাল ডিমনেশিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি আশা করেন, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এবারের ফলাফল আগের চেয়ে ভালো হবে। গতকালের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চার ক্যাটাগরিতে ৮৫ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আহম্মেদ জাওয়াদ। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় সে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য অলিম্পিয়াড পুরস্কারেও ভূষিত হয়। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজের তাসমীম রেজা, জুনিয়রে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দেওয়ান সাদমান হাসান ও প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবনীতা পাল চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান। এবার সেরা গণিত ক্লাব হয়েছে চট্টগ্রাম ম্যাথ সার্কেল। রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতায় ৯ দশমিক ৭৯ সেকেন্ডে কিউব মিলিয়ে বাংলাদেশে নতুন রেকর্ড তৈরি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব ইবনে রশিদ। উল্লেখ্য যে এবারের আঞ্চলিক গণিত উৎসবে সারা দেশের ১৫টি অঞ্চলের ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী ১ হাজার ১২০ জন শিক্ষার্থী জাতীয় এই উৎসবে অংশ নেয়।

No comments

Powered by Blogger.