যুক্তরাষ্ট্রে শত শত অবৈধ অভিবাসী আটক, আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের বৈধতা নেই এমন অভিবাসীদের ধরতে অভিযান চলছে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষ একে নিয়মিত অভিযান বললেও অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি অঙ্গরাজ্য থেকে কয়েক শ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেককেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে আশ্রয় পেতে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা শরণার্থীরা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে উদ্বিগ্ন হয়ে এখন তুষারপাত আর প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে সীমান্ত পেরিয়ে কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছেন। সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের সাময়িক নিষেধাজ্ঞার জেরে অনেক বৈধ অভিবাসীও শঙ্কায় ভুগছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশের প্রেক্ষাপটে অবৈধবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে বলেই আতঙ্কের মাত্রাটা বেশি। অবশ্য ওই আদেশের অংশ বিশেষ আদালতে স্থগিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আলী নুরানি এক বিবৃতিতে বলেছেন,
অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনার খবর উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম এনফোর্সমেন্ট বিভাগের লস অ্যাঞ্জেলেসের ফিল্ড অফিসের পরিচালক ডেভিড মেরিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আটলান্টা, নিউইয়র্ক, শিকাগো ও লস অ্যাঞ্জেলেস এবং এসব এলাকার আশপাশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, এটি সংস্থার নিয়মিত কাজের অংশ। বারাক ওবামার আমলেও এটি হয়েছে। ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালে গত গ্রীষ্মেও লস অ্যাঞ্জেলেসে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান। গত এক সপ্তাহে মোট কতজনকে ধরা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে আটলান্টা থেকে ২০০ এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১৬১ জনকে ধরার কথা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। ডেভিড মেরিন বলেছেন, যাঁদের ধরা হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই অনেক আগে থেকে আটকাদেশ আছে। তাঁদের অনেকেই নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে যে ১৬১ জনকে ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫ জনের বিরুদ্ধে আগে থেকে আটকাদেশ ছিল না। তিনি বলেন, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় যাঁদের ধরা হয়েছে তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০ জনের নাম অপরাধীর তালিকায় নেই। তবে এই ১০ জনের ৫ জনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বহিষ্কারাদেশ ছিল। ডেভিড মেরিন বলেন,
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযান চালানো বলে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে, তা একেবারেই কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। তবে লাস ভেগাসে অবস্থিত নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল কাগান বলেন, অভিযানের ধরন দেখে মনে হতে পারে ওবামার আমলে যাঁদের বিরুদ্ধে আটকাদেশ ছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তাঁদেরই ধরছে; এখানে ঢালাও কিছু হচ্ছে না। কিন্তু এই ধরপাকড় শিগগিরই ব্যাপক মাত্রায় রূপ নিতে পারে। শরণার্থীরা কানাডার পথে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের প্রতিবেশী কানাডার কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে হেঁটে গত সপ্তাহান্তে ২৪ জন আশ্রয়প্রার্থী কানাডার সীমান্ত শহর এমারসনে প্রবেশ করেছেন। এক দিনে শরণার্থীদের এই সংখ্যা একটি রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে কানাডা অভিমুখে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শরণার্থী ও মুসলিমপ্রধান সাত দেশের নাগরিকদের প্রবেশ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করায় দেশটিতে আশ্রয়প্রার্থীদের উত্তর দিকে চলে যাওয়া বেড়েছে। ট্রাম্প গত বছরের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আশ্রয়প্রার্থীরা কানাডার দিকে চলে যেতে শুরু করেন। কানাডার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসে দেশটির এমারসন শহরে তাপমাত্রা ছিল শূন্যের ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে।

No comments

Powered by Blogger.