অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতায় জনস্বাস্থ্য সমস্যা

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের বাজার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। এটি ওষুধের বাজারের প্রায় ১৬ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহারে বাজার বড় হচ্ছে। তবে রোগ নিরাময়ে এর অকার্যকারিতা জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার ‘স্যামসন এইচ চৌধুরী স্মৃতি সম্মেলন ২০১৭’-এর দ্বিতীয় অধিবেশনে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ঢাকা ক্লাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। ওষুধশিল্প মালিক, কর্মকর্তা, ওষুধ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এতে অংশ নেন। সকালের প্রথম অধিবেশনে ‘কমন টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট’-এর ওপর বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ফ্রিল্যান্স পরামর্শক মো. জহিরুল ইসলাম খান। স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সম্মানে প্রতি দুই বছর পর এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের চতুর্থ ও শেষ অধিবেশনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশ যখন কোনো সাফল্য অর্জন করে, তখন এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে। ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। এটা বড় সাফল্য। এখন কিছু চেনামুখ ওষুধশিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধি ও রোগ নিরাময়ে অকার্যকর হওয়ার প্রবণতা নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপিকা সানিয়া তাহমিনা। তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার রোগ নিরাময়ে বিস্ময়কর অবদান রেখেছিল। উন্নত বিশ্ব ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। বৈশ্বিক হিসাব উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে মূলত অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার কারণে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইসমাইল খান বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়া এখন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শুধু মেধা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না, সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ওয়াসিফ আলী খান বলেন, গণমাধ্যম সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তৃতীয় অধিবেশনে় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে দুজন নবীন বিজ্ঞানীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ারা সুলতানা এবং জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল বাসার মীর মো. খাদেমুল ইসলাম। দিনব্যাপী এই সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। শেষ অধিবেশনে তিনি বলেন, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রাখছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে কিছু বিষয়ে সরকার অনেক বেশি কর ধার্য করে, যা শিল্প সহায়ক নয়।

No comments

Powered by Blogger.