শিক্ষায় তুঘলকি উন্নতি!

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের নানা আয়োজন নিয়ে গণমাধ্যম যখন ব্যস্ত, তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েকজন অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন। কয়েকজন সাধারণ অভিভাবক এবং তাঁদের শিশুদের নীরব শান্তিপূর্ণ সেই প্রতিবাদের কোনো ছবি কোনো সংবাদপত্রেই চোখে পড়েনি। তবে সেসব ছবি দিয়ে ফেসবুকে অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। ওই সব মন্তব্যের কোনো কোনোটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দণ্ডনীয়ও হতে পারে। কিন্তু ওই প্রতিবাদের একটি পোস্টারের কথাগুলো তুলে না ধরলেই নয়। ওই পোস্টারে লেখা ছিল: * প্রশ্নফাঁস পরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত উত্তর বলে দেওয়া পরিকল্পিত; * বেশি নম্বর দেওয়া পরিকল্পিত; * এই এ+ মিথ্যা; এই ১০০% পাস মিথ্যা; * শুধু সত্য জাতি ধ্বংস এবং এই সত্য আমরা মানি না। অভিভাবকেরা যে ব্যানারটি ধরে ছিলেন তাতে লেখা ছিল: সরকার যদি সত্যিই শিক্ষার মানের উন্নয়ন করে থাকে, তবে সরকারের সব মন্ত্রী, সাংসদ, সামরিক–বেসামরিক আমলা, নেতা আর তাঁদের গুণগ্রাহী বুদ্ধিজীবী-শিল্পপতির সন্তান বা নাতিপুতিদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো বাধ্যতামূলক করা হোক।
তাঁদের সত্য উচ্চারণের জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। এসব অভিভাবক যেদিন এই প্রতিবাদ জানান, সেদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসরোধে তিন বছর আগের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্কুল-কলেজের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন থামছেই না। সরকার প্রশ্ন ফাঁসরোধে তিন বছর আগের সুপারিশগুলো এখন যে বাস্তবায়নের কথা বলছে, তা এত দিনে কেন বাস্তবায়ন করা গেল না, তার ব্যাখ্যা নেই। এই তিন বছরে নানা ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক লাখের বেশি। মানতেই হবে এরা কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের জন্য কারও জবাবদিহির রেকর্ড নেই। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন যে বিজি প্রেস ছিল প্রশ্নফাঁসের প্রধান উৎস এবং সেটি বন্ধ করা গেছে। এখন স্কুল-কলেজের কোনো কোনো শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন। তদন্ত হচ্ছে, ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েক বছর আগে বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের কথা আমরা জানি। কিন্তু সেই গ্রেপ্তারে যে প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয়নি সেটি স্বীকার করতেই সরকারের তিন বছর কেটে গেল। একেকটি দুঃসংবাদের জন্ম হয় আর আগেরটি চাপা পড়ে যায়। প্রশ্নফাঁসের খবরও চাপা পড়ে যায়। প্রশ্নফাঁসরোধে সরকারের নীতি সম্পর্কে যেটুকু তথ্য আমরা সবাই জানি তা হলো, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রকাশের দায়ে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রয়োগের বিধান করা হয়েছে। এই বিধানের মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকতার অধিকার ক্ষুণ্ন করলেও এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর প্রকাশের মাধ্যমে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ায় সংবাদমাধ্যমও কিছুটা ধন্যবাদের দাবিদার। দুঃসংবাদ চাপা পড়ার সাম্প্রতিকতম একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে পাঠ্যবইয়ের কেলেঙ্কারি। ভুলে ভরা বই সংশোধনের কাজ গত দেড় মাসে কত দূর এগোল তা নিয়ে রাজনীতিকদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ফলে, ভুলে ভরা বই থেকে ছাত্রছাত্রীরা যে ভুল শিখছে না এমন দাবি নিশ্চয়ই কেউ করবেন না। আর হ্যাঁ, যেসব পাঠ্যবইয়ের কথিত ইসলামীকরণ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরাও বেশ কৌশলী হয়ে উঠেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যসূচিতে ধর্মীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি লেখক ও সম্পাদকদের অগোচরে কীভাবে ঘটল, তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা মেলেনি। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ড যেমন তা জানে না, তেমনি জানেন না মন্ত্রী কিংবা মন্ত্রণালয়ের কর্তারা। হেফাজতের সমর্থন পাওয়ার জন্য পাঠ্যবই নিয়ে আওয়ামী লীগের আপসরফা তাঁদের বিবেচনায় ততটা ক্ষতিকর নয়, যতটা হতো একই বিষয়ে জামায়াতের জন্য বিএনপির ছাড় দেওয়ায়।
বলে রাখা ভালো, পাঠ্যসূচির ধর্মান্তরকরণ বাংলাদেশেই প্রথম ঘটছে এমন নয়। রাজনৈতিক কারণে পাঠ্যসূচির গেরুয়াকরণ ভারতেও ঘটেছে এবং তা ঘটেছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির ক্ষমতালাভের পর। ভাগ্যক্রমে, শিক্ষার বিষয়টি শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের একক এখতিয়ার নয়। রাজ্য সরকারগুলোর এখতিয়ারও আছে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গ কিংবা কেরালার মতো রাজ্যগুলো পাঠ্যবইয়ের গেরুয়াকরণ থেকে মুক্ত রয়েছে। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই খুব বড় করে তাঁদের যে সাফল্যটি উদ্যাপন করে তা হলো সারা দেশে বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া। কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর কাছে সময়মতো বই পৌঁছে দেওয়া নিশ্চয়ই বড় কাজ। কিন্তু বইয়ের সারবস্তু যদি হয় বিভ্রান্তিকর, তাহলে সেই কৃতিত্ব কি অপকর্মে রূপান্তরিত হয়ে যায় না? ভুলে ভরা বই প্রত্যাহার কি একেবারেই অসম্ভব ছিল? কোটি বই ছাপিয়ে সময়মতো বিতরণ যদি সম্ভব হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ফেরত নিয়ে প্রয়োজনমতো সংশোধন কেন সম্ভব নয়? শুধু মধ্যম সারির দু-একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং তদন্ত কমিটি গঠনেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। শিক্ষার এই দুরবস্থা নিয়ে রাজনীতিকদের কোনো বিতর্ক নেই, আমলাদের কোনো উদ্বেগ নেই, দলবাজ বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চুপ, ছাত্র আন্দোলন কী, সেটা তো অনেক আগেই ভুলে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। কথিত পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে পাসের হার গত কয়েক বছরে বাড়তে থাকায় আমরা সরকার ও শিক্ষাকর্তাদের আকর্ণবিস্তৃত হাসি দেখেছি। কিন্তু যাঁরা পরীক্ষার খাতা দেখার কাজটি করে থাকেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁরা তাঁদের অস্বস্তির কথা ফিসফাস করে বলে আসছেন। রাজনৈতিক সুবিধা পেতেই পাসের হার বাড়ানো হচ্ছে—এমন অভিযোগ অবশ্য ২০১১ সাল থেকেই সরকার অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দৈন্য দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জোর দিয়ে বলছেন যে কথিত পাবলিক পরীক্ষায় কোনো না কোনো ঘাপলা থেকে যাচ্ছে। আর এ কারণে আমাদের নতুন পাস করা তরুণদের যোগ্যতার পরিচয় দেশের শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্ণধারেরা ভালোই টের পাচ্ছেন। শিল্প-বাণিজ্যে কাজের লোকের অভাব তাই মেটাচ্ছেন প্রায় লাখ পাঁচেক বিদেশি। ২. এবার অন্য কয়েকটি দেশের কথা বলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান আণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে, কিংবা পাকিস্তানের রাজধানী হিন্দুকুশ পর্বতের খাইবার পাসে অবস্থিত ইসলামিক ইসলামাবাদে অথবা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী নিহত হন ১৯৪৮ সালের ৩০ অক্টোবর। বছর তিনেক আগে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এ রকম ১৫৯টি ভুল পাওয়া গিয়েছিল ভারতের গুজরাট রাজ্যে (টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। টাইমস অব ইন্ডিয়ার হিসাবে ওই একটি ক্লাসের ইংরেজিতে প্রকাশিত সমাজবিজ্ঞানের ১২৪ পাতার বইতে ৫৯টি ভুল তথ্য এবং ১০০টি বানান ভুল ছিল। গুজরাট রাজ্য স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট তখন পত্রিকাটিকে বলেছিলেন যে এত বই প্রত্যাহার করে সংশোধন করা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা অনলাইনে সংশোধিত বই প্রকাশ করবেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিবিসি অনলাইন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ফাইভ বিজায়ার লেসনস ইন ইন্ডিয়ান টেক্সট বুকস। এতে লেখা হয় ভারতেরই ছত্তিশগড় রাজ্যে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য তৈরি একটি পাঠ্যবইতে লেখা হয়েছিল স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে বেকারত্ব বেড়েছে, কেননা নারীরা বিভিন্ন খাতে চাকরি নিয়ে নিচ্ছেন। দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটি ছিল ১১ বছর বয়সীদের জন্য কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক বোর্ডের বই, যাতে লেখা হয়েছিল যারা মাংস খায় তারা সহজেই প্রতারণা করে, মিথ্যা বলে, প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যায়, অসৎ, বাজে কথা বলে, চুরি করে, মারামারি করে এবং যৌন অপরাধ করে থাকে। এর আগে ২০০৬ সালে রাজস্থানে ১৪ বছর বয়সীদের পাঠ্যবইতে গাধাকে গৃহবধূদের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
হিন্দি ভাষার ওই পাঠ্যবইতে লেখা হয়, ‘একটি গাধা হচ্ছে একজন গৃহিণীর মতো। গাধাকে তার মতো সারা দিন পরিশ্রম করতে হয়, এমনকি খাবার এবং পানি ছাড়াই থাকতে হতে পারে। তবে গাধারা একটু ভালো যে তারা কখনোই তার প্রভুর অবাধ্য হয় না। কিন্তু গৃহিণী কখনো কখনো অভিযোগ করতে পারে এবং বাবার বাড়ি চলে যায়।’ টাইমস অব ইন্ডিয়া বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্তাদের সঙ্গে কথা বললে জবাব মেলে, তুলনাটি করা হয়েছিল মজা করার জন্য। গুজরাটের কাহিনি তো আগেই বলেছি। মহারাষ্ট্রের ইংরেজি ভাষার পাঠ্যবইতে সুয়েজ খালের বানান যা লেখা হয়েছে তার মানে দাঁড়ায় পয়োনালা। এ রকম ঘটনা শুধু যে আমাদের উপমহাদেশে ঘটে, তা কিন্তু নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের ঘটনার নজির রয়েছে। মাত্র বছর দু-এক আগে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি পাঠ্যবইয়ে আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীদের নিয়ে আসার ইতিহাস অস্বীকারের অভিযোগ ওঠায় বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ম্যাকগ্র হিল আড়াই লাখের বেশি বই বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ৩. আমি যুক্তরাজ্যে যাই ১৯৯৭ সালে। আমার তখনকার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বিবিসির বিদেশ থেকে আসা কর্মীদের দেশটাকে চেনানোর একটি নিয়ম ছিল। সে রকম একটি উদ্যোগ ছিল অক্সফোর্ডে এক সপ্তাহের আবাসিক ক্যাম্প। ব্রিটেনকে জানুন নামের ওই শিবিরে রাজনীতিকদের মধ্যে এসেছিলেন তখনকার প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী এস্টেল মরিস। সেটাই কোনো ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে আমার মুখোমুখি সাক্ষাৎ। সাবেক শিক্ষক ও শিক্ষকদের ইউনিয়নের সংগঠক থেকে শিক্ষামন্ত্রী। পুরো একটি অধিবেশনে মিস মরিস ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার নানা খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করলেন। ২০০১-এ লেবার পার্টি পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পদোন্নতি ঘটে এবং তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেন। মিস মরিস পদত্যাগের কারণ হিসেবে যা বলেছিলেন সেই কথাটি তুলে ধরার জন্যই এ প্রসঙ্গটির অবতারণা। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের কোনো অভিযোগ ছিল না। শিক্ষকেরাও যে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন, এমন নয়। কিন্তু চিফ ইন্সপেক্টর অব স্কুলস-এর সে বছরের রিপোর্টে ছাত্রছাত্রীদের সাক্ষরতা ও সংখ্যা গণনায় কাঙ্ক্ষিত মান অর্জিত না হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মিস মরিস সেটিকে তাঁর ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করে পদত্যাগ করেছিলেন। আমাদের দেশেও স্কুল ইন্সপেক্টর পদটি ব্রিটিশ আমল থেকে চালু ছিল এবং এখনো আছে। তবে বাংলাদেশে তাঁরা স্বাধীনভাবে কোনো রিপোর্ট তৈরি করেন, এমন দাবি নিশ্চয় কেউ করবেন না। তবে বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালের এক রিপোর্টে সরকারের এক সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করে বলেছে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কে সন্তোষজনক মান অর্জনের পরিমাণ পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র ২৫ শতাংশ আর অষ্টম শ্রেণিতে তা ৪৪ শতাংশ। শিক্ষার এসব অনন্য অর্জনকে কি তুঘলকি উন্নতি ছাড়া আর কিছু বলা যায়?
কামাল আহমেদ: সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.