শখের বশে কোয়েল পালন করে লাভবান

অনেকটা শখের বশেই বাড়িতে কোয়েল পালন শুরু করেন সুজন সরকার (৩৮)। ছয় মাস না যেতেই তিনি দেখেন লাভের মুখ। এরপর বাড়িতেই গড়ে তোলেন কোয়েলের খামার। এখন কোয়েলের ডিম বিক্রি করে বেশ লাভবান তিনি। সুজন সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের পাঞ্জনখাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এখন তাঁর খামারে প্রায় চার হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে।
লেয়ার মুরগির খামারও রয়েছে তাঁর। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কম পুঁজি নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়। কোয়েলের আকার ছোট বলে এদের লালনপালনের জন্য জায়গাও কম লাগে। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০ থেকে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য উপযোগী। রোগব্যাধির দিকে থেকে কোয়েলের খামার খুবই লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ কোয়েলের রোগব্যাধি প্রায় হয় না বললেই চলে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে। ১০ ফেব্রুয়ারি সুজনের কোয়েলের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে টিনশেডের তৈরি খামারে সুজন কোয়েলের যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় সুজন বলেন, তিন বছর আগের কথা। একদিন মানিকগঞ্জ শহরের একটি বাজারে মুরগির ডিম বিক্রির করতে যান। দেখতে পান, ক্রেতারা ওই বাজার থেকে কোয়েলের ডিম কিনছেন। মুরগির চেয়ে কোয়েলের ডিমের চাহিদাও কম নয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে কোয়েল পালনের আগ্রহ জন্মে তাঁর। সিদ্ধান্ত নিলেন কোয়েল পালনের। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন, কোথায় কোয়েলের বাচ্চা পাবেন, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। এর এক সপ্তাহ পর বাজারের ওই ডিম বিক্রেতার কাছে খোঁজ পান কোথায় কোয়েলের বাচ্চা পাওয়া যায়। পরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন কোয়েলের পালন। শুরুতেই ২১ হাজার টাকায় যশোর থেকে ৪ সপ্তাহের ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা কিনে আনেন। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা এতে নিষেধ করেছিলেন।
তবে কোয়েলের ডিমের চাহিদার বিষয়টি তাঁদের আগ্রহ জোগায়। এ ছাড়া কোয়েল পালনের শখও ছিল সুজনের। এই দুই কারণে বাড়িতেই কোয়েল পালন শুরু করেন। চার সপ্তাহ পালনের পর সেগুলো ডিম দিতে শুরু করে। এর বছরখানেক পর বাড়ির পাশে কোয়েলের খামার করেন। বর্তমানে খামারে কোয়েল পাখির সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, যার সবই এখন নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। এসব ডিম তিনি মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। প্রতিটি ডিম ১ টাকা ৭০ পয়সা দরে বিক্রি করছেন। এ থেকে খরচ বাদে প্রতিদিনত×তাঁর ৩ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তাঁর দেখাদেখি আরও দুই যুবক কোয়েলের খামার করেছেন। স্থানীয় গড়পাড়া বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক চান মিয়া বলেন, দিন দিন কোয়েলের ডিম ও মাংসের চাহিদা বাড়ছে। সুজনের মতো কোয়েলের খামার করে বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে কোয়েল পালন করা যায়। এর মাংস, ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ কারণে দিন দিন কোয়েল পালনে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.