‘বর্ডার ক্লিন’ অভিযানে তুরস্ক

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ও কুর্দিদের পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) দখলে থাকা এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করেছে তুরস্ক। সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায় এ অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার সিরিয়ার শহর জারাব্লুজে গোলাবর্ষণ করে তুর্কি সেনাবাহিনী। জারাব্লুজ থেকে আইএস হটাতে তুরস্কের গাজিয়ানতেপ এলাকায় জড়ো হয় দেড় হাজারের অধিক তুর্কি সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীরা। একই সঙ্গে সিরিয়ার মানবিজের কাছে কুর্দি ওয়াইপিজির অবস্থান লক্ষ্য করেও হামলা চালায় তুরস্ক। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের। এএফপির খবরে বলা হয়, শনিবার আঙ্কারার নিকটবর্তী শহর গাজিয়ানতেপে হামলায় ৫৪ জন নিহত হন। নিহতদের ২২ জনই শিশু। এরপরই তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার প্রায় ৮০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এক তুর্কি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইতিমধ্যে ওয়াইপিজিকে লক্ষ্য করে ২০টি হামলা চালানো হয়েছে। আর সীমান্ত অতিক্রম করে আইএসের অবস্থানের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত থেকে আইএসকে হটিয়ে দিতে প্রতিশ্র“তি দেয়ার পরই এ হামলা শুরু হল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে আইএসকে ‘পরিপূর্ণরূপে ক্লিন’ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি আইএসমুক্ত করা উচিত এবং এ জন্য যা যা করতে হবে তা করতে আমরা প্রস্তুত। এদিকে, শনিবারের আÍঘাতী হামলায় যে শিশুটিকে ব্যবহার করা হয়েছে, তার অজ্ঞাতেই সবকিছু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তুর্কি তদন্ত কর্মকর্তারা। একজন তদন্ত কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘খুব সম্ভবত জঙ্গিরা শিশুটির অজ্ঞাতসারেই তার শরীরে বিস্ফোরক রেখেছে। অথবা হতে পারে শিশুটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছিল, না বুঝেই সে বোমাটি বহন করেছে এবং দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ জন্যই আইএসের ওপর এমন ফুঁসে উছেঠে তুরস্ক।’ এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছিল তুরস্ক। তুরস্ক ওয়াইপিজিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) একটি শাখা বলে মনে করে।
১৯৮০ সাল থেকে কুর্দিদের স্বাধীনতার জন্য তুর্কি সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে আসছে পিকেকে। ওয়াইপিজির রাজনৈতিক সংগঠন কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টির (পিওয়াইডি) বিরোধিতা করে তুরস্ক। ওয়াইপিজি বর্তমানে তুর্কি সীমান্তে হাসাকা থেকে আফরিন শহর পর্যন্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। কুর্দিদের এই গ্রুপে বেশ উল্লেখযোগ্য অবস্থান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ)। এদিকে, ওয়াইপিজি দখলে থাকা সিরিয়ার মানবিজ শহরেও হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। আগস্ট মাসের শুরুতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় আইএসের কাছ থেকে মানবিজ শহর দখল করে ওয়াইপিজি। গাজিয়ানতেপ থেকে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে দেড় হাজারের অধিক তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহী সৈন্য। একজন সিনিয়র বিদ্রোহী যোদ্ধা রয়টার্সকে বলেন, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) ব্যানারে তারা আইএস ও কুর্দিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কারণ তুরস্ক চায় সীমান্ত এলাকায় আইএস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দখল করুক এফএসএ।

No comments

Powered by Blogger.