টিমবুকতু ঐতিহ্য কী কেন ধ্বংস হল

২০১২ সালের ১ জুলাই টিমবুকতু
স্থাপনা ধ্বংস করছে জঙ্গিরা -এএফপি
একদিকে সাহারা মরু। আরেকদিকে পশুচারণের নির্মল তৃণভূমি। আর আছে শত বছরের পুরনো কিছু নিদর্শন- এই নিয়েই মালি। বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকার একটি হতদরিদ্র রাষ্ট্র এটি। ঐতিহাসিক স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাগুলোই এর একমাত্র গর্ব। এজন্যই বিখ্যাত দেশটির টিমবুকতু নগরী। কিন্তু ২০১২ সালে জঙ্গিদের তাণ্ডবে শেষ হয়ে গেছে তা। তবে সম্প্রতি আবারও সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে শহরটি।
কে নির্মাণ করেছিল পবিত্র স্থাপনাগুলো : চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে আফ্রিকায় মুসলমান শাসনের স্বর্ণযুগে নির্মাণ করা হয়েছিল স্থাপনাগুলো। সুরম্য মসজিদ, মাজার এবং মনোরম সমাধিক্ষেত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে মুসলিম শাসনের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দেয়া হয়েছিল তখন। মুসলমান ধর্মগুরুদের অধীনে সে সময় এই স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়। এরপর সেগুলোর দেখাশোনা করতেন বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত খাদেম, স্থানীয় মানুষ এবং পৃষ্ঠপোষকরা। ১৯৮৮ সালে টিমবুকতু শহরের এ ধরনের ১৩টি স্থাপনাকে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।
কেন এগুলোকে পবিত্র মনে করা হতো : ৩৩৩ সাধুর শহর বা মরুভূমির মুক্তা বলে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এই নগরী। স্বর্গীয় প্রশান্তি খোঁজার আশায় সমগ্র বিশ্ব থেকে মুসলিম পর্যটকরা এই স্থাপনাগুলো পরিদর্শনে আসত। নগরীর আদি বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্বাস করতেন যে, এই পবিত্র স্থাপনাগুলো তাদের সব ধরনের বিপদ থেকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। মেয়ের বিবাহ থেকে শুরু করে প্রয়োজনে বৃষ্টি নামানোর জন্যও স্থানীয়রা ধর্মগুরুদের শরণাপন্ন হতেন। ইউনেস্কো এই জায়গাকে মালি ও পশ্চিম আফ্রিকার অধিবাসীদের পবিত্র ধর্মীয় অঞ্চল বলে অভিহিত করেছে।
কেন এগুলো ধ্বংস করা হল : ২০১২ সালের এপ্রিলে আল কায়েদাপন্থী আনসার দ্বীনের বিদ্রোহীরা মালির উত্তরাঞ্চলের দখল নেয়ার পর কুঠার দিয়ে চুটিয়ে চুটিয়ে ধ্বংস করে মসজিদসহ শত বছরের পুরনো এই স্থাপনাগুলো। কয়েকশ’ বছরের এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছে জঙ্গিরা। প্রাচীন মাজার এবং সমাধিক্ষেত্রগুলোকে ধর্মবিরোধী স্থাপনা বলে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ফরাসি বাহিনীর নেতৃত্বে মালি সরকার উত্তরাঞ্চল পুনরুদ্ধার করার আগ পর্যন্ত নাশকতা অব্যাহত রাখে তারা। জঙ্গিরা প্রথমে টিমবুকতুর অধিবাসীদের এসব স্থানে গিয়ে প্রার্থনা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে স্থাপনাগুলোকেই ধ্বংস করে তারা।
কেন জরুরি হয়ে উঠেছে আইসিসি’র মামলা : এটাই প্রথম মামলা, যেখানে জঙ্গিবাদের অপরাধে বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এমনকি সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে বিবেচনা করে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও হেগের এই আদালতে প্রথম কোনো জঙ্গি বিচারের শুনানিতে উপস্থিত হয়েছে। এমনকি নিজের দোষ পর্যন্ত স্বীকার করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি।
পবিত্র স্থাপনাগুলোর পরিণতি কী হয়েছে : ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য নতুন করে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করেই ২০১৪ সালের মার্চ থেকে এ প্রক্রিয়া চলেছে। পুরনো ছবি দেখে ঠিক আগের মতো করেই নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো। এজন্য অর্থ সাহায্য দিয়েছে ইউনেস্কোসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে সংস্কার কাজ শেষ হয় এবং ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.