ঝিনাইদহে আর কত মায়ের বুক খালি হবে? by সাজেদুল হক

আর্তনাদ এখনও থামেনি। মা বাধা দিয়ে সন্তানকে রাখতে পারেননি। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তুলে। ঝিনাইদহে এ কাহিনী এখন নিত্যকার। তিন বছরে এমন তুলে নেয়ার পর লাশ মিলেছে ২৪ জনের। এতোদিন সংখ্যাটি ছিল ২৩। বুধবার যোগ হয়েছে আরেকটি নাম। সোহানূর। কতই বা ছেলেটির বয়স। কেবল ১৬। মিষ্টি-মায়াবী মুখের ছবি দেখে হাহাহার জাগে। এই ছেলেটিকেও গুলি করে মেরে ফেলা হলো। সবাই জানেন কারা মারছেন। কিন্তু আতঙ্কগ্রস্থ এক জনপদে এ নিয়ে প্রতিবাদের কেউ নেই। সোহানূরের মা বলছেন, তার ছেলের কোন রাজনীতি ছিল না। কোন দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। কোন মামলাও ছিল না। তবুও রেহাই মিলেনি সোহানূরের।
এখন প্রশ্ন উঠেছে এরপর কে? এরপর বুক খালি খালি হবে কোন মায়ের। সোহানূরের ভাগ্য বরণ করবেন আর কোন তরুণ বা যুবক। না সোহানূরের জন্য কান্নার কেউ নেই। এ দেশে কোথাও খাল দখল হলে, কোথাও রাস্তায় গাছ কাটা হলে প্রতিবাদ হয়। আদেশ আসে। কিন্তু সোহানূরের জন্য এমন কিছু হবে না তা হয়তো নিশ্চিতই থাকা যায়। প্রতিবাদ আর প্রতিকারের জন্যও রক্তের গ্রুপের মিল থাকা চাই। মানুষের জীবন কখন যে এদেশে এতো সস্তা হয়ে গেলো তা বুঝা দায়। জীবনের এখানে কোন দাম নেই। যারা হত্যার শিকার হচ্ছেন হতে পারে তাদের কোন রাজনীতি আছে। হতে পারে তারা অপরাধী। সভ্যতার দাবি তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। তা না করে এভাবে বুকে গুলি করে হত্যা করা কেমন বিচার। কোন আদালতের রায়ে হত্যা করা হচ্ছে তাদের। কারা সেই বিচারক। এই গুপ্ত হত্যা বন্ধে আদালতেরও কি কোন দায় নেই।
ঝিনাইদহের ঘরে ঘরে এ কান্নাররোল কখন বন্ধ হবে কেউ জানেন না। কেউ জানেন না পরবর্তী শিকার কে হবেন। একটি স্বাধীন দেশের এক জনপদের মানুষের এভাবে বেঁচে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে। নাকি তারা মৃত? নাকি আমরা সবাই আসলে মৃত। আমরা তা বুঝতে পারছি না। ঝিনাইদহে তিন বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৩৭), ইউসুফ আলী বিশ্বাস (৪০), উজ্জ্বল হোসেন (৩২), আসাদুল ইসলাম (৩০), মফিজুল হক, এনামুল হক বিশ্বাস (৫৫), ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম (৩৮), হাদিউজ্জামান হাদি (৪০), সোহাগ সরদার (৩০), মইনুদ্দিন, গোলাম আজম ওরফে পলাশ (২৮), দুলাল হোসেন (২৯),  মিরাজুল ইসলাম, তৈমুর রহমান তুরান (৩৫), ছব্দুল হোসেন (৪৫), এনামুল হোসেন (২৩), রবিউল ইসলাম রবি (৪৭), শরিফুল ইসলাম নজু, আবু হুরাইরা (৫২), হাফেজ জসিম উদ্দীন, আবুজার গিফারী, শামীম মাহমুদ ও সোহানূর। একজনের লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আরও কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.