ধোলাইখালের ব্যস্ত সড়কজুড়ে ট্রাক

পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় সড়ক দখল করে
ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে
দিনের বেলায় সড়কে ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ, কিন্তু রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় শুধু চলাচল নয়, ব্যস্ত সড়ক রীতিমতো ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এ জন্য ওই সড়ক ছাড়াও টিপু সুলতান রোড, রোকনপুর, ঋষিকেশ দাস রোড, মুরগিটোলা প্রভৃতি এলাকার রাস্তায় প্রতিদিন দীর্ঘস্থায়ী যানজট হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই এলাকায় গেলে এমন অবস্থা চোখে পড়ে। বেলা একটার দিকে দেখা যায়, জনসন রোডের মোড় থেকে পুরো ধোলাইখাল এলাকায় যানবাহন স্থবির হয়ে আছে। টিপু সুলতান রোড দিয়ে কিছু যানবাহন রথখোলা হয়ে যাতায়াত করছিল। বাকি যেসব যানবাহন জনসন রোড বা ধোলাইখাল যাওয়ার জন্য এগোচ্ছিল, সেগুলো রাস্তার মুখে এসে আটকে যাচ্ছে। রোকনপুর স্কুলগেট থেকে মুরগিটোলা পর্যন্ত যানবাহনের ভিড়। উল্টো দিকে নারিন্দা যাতায়াতের পথেও যানজট। দয়াগঞ্জের দিকে যাওয়ার রাস্তায় যত দূর চোখ যায়, খালি জায়গা নেই, শুধু যানবাহন। সব রাস্তার যখন এমন দশা, সেখানে ধোলাইখাল প্রধান সড়কে বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে ৩০টির মতো খালি ট্রাক। এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল হক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তেজগাঁও ও গাবতলী থেকে যদি দীর্ঘদিনের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উঠিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে এখানে কেন সম্ভব হবে না?’
একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী আবদুর রহিম গুদামে যাচ্ছিলেন ওষুধ আনতে। হাঁটতে গিয়ে যানজটে বাধা পেয়ে বিরক্ত হয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রাখেন, সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে হাঁটাচলার অবস্থা কি কখনোই আসবে না?
প্রথম আলোর আলোকচিত্রী এলোমেলোভাবে সড়কে রাখা ট্রাকের ছবি তুলতে গেলে একদল লোক এগিয়ে আসেন। তাঁরা ছবি তুলতে বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেন। রাস্তার ওপর ট্রাক রাখা নিষেধ, যানজট হচ্ছে—এ কথা বলার পরও তাঁদের চোখেমুখে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না। পরে দলের একজন বলেন, এখানে ট্রাক না রেখে তাঁদের উপায় নেই। এগুলো সরিয়ে দিলে তাঁদের পেটে লাথি মারা হবে। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র প্রথম আলোকে বলেন, ইতিপূর্বেও সড়কের ওপর থেকে ট্রাক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন সড়কে ট্রাক না রাখেন, সে বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাক ছাড়াও ধোলাইখালে সড়কের মধ্যেই বড় বড় ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি ভাঙার কাজে নিয়োজিত একদল শিশু-কিশোর। দুই পাশের পুরোনো মোটর যন্ত্রাংশের দোকানগুলোর হয়ে কাজ করছে তারা। এসব কাজের জন্যও সড়কের দৈর্ঘ্য কমে আসছে। সড়ক বিভাজকের ওপর যেটুকু জায়গা, তার প্রায় পুরোটাই দখলে গাড়ির পুরোনো হর্ন বিক্রেতাদের। পথচারীদের এপার-ওপার যাওয়ার উপায় নেই। অনেক ঘুরে রাস্তা পেরোনোর ভোগান্তি তাঁদের সহ্য করতেই হচ্ছিল। রোকনপুর স্কুল প্রান্তে চাকার দোকানগুলোর অনেক চাকা সড়কের ওপরই রাখা। সেগুলোর জন্যও যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। চাকা ব্যবসায়ী রকিবুল হোসেন বলেন, গাড়ির চাকা লাগানোর জন্য রাস্তাতেই চাকা রাখতে হচ্ছে। একপর্যায়ে দেখা যায়, বড় বড় কাভার্ড ভ্যান ঢুকে পড়ায় ধোলাইখাল থেকে টিপু সুলতান রোডে যাওয়ার পথটি প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। দিনের বেলায় কাভার্ড ভ্যানও চলাচল নিষেধ, কিন্তু কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে দেখা গেল না।

No comments

Powered by Blogger.