নাজিম উদ্দিন হত্যা

নাজিম উদ্দিন
বেঁচে থাকতে নাজিম উদ্দিন সামাদের অনেকগুলো পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষার্থী, ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। কিন্তু এখন তাঁর একটি পরিচয়, মৃত। দুর্ভাগ্য, এই সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁকে হত্যাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। বুধবার রাতে রাজধানীর সূত্রাপুরে দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপ ও গুলিতে নিহত হন এই তরুণ। পুলিশের ধারণা, নাজিম উদ্দিন সামাদকে জঙ্গিগোষ্ঠী হত্যা করতে পারে। এর আগে একই গোষ্ঠীর হাতে খুন হয়েছেন আরও ছয়জন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। কিন্তু সেই জঙ্গিগোষ্ঠীর পরিচয় কী? তারা কোথায় থাকে? বাংলাদেশে কোনো ব্লগার বা অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট খুন হলেই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস বা আল-কায়েদা দায় স্বীকার করে। আর সরকার বরাবরই তা অস্বীকার করে জানিয়ে দেয়, এখানে আল-কায়েদা বা আইএস নেই। তাহলে কারা একের পর এক ব্লগারদের হত্যা করেছে, তা সরকারকেই বলতে হবে। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত জনমনে আতঙ্ক কাটবে না। জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে গত তিন বছরে সাতজন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নিহত হলেও একমাত্র রাজীব হায়দার ছাড়া কোনো হত্যার বিচার হয়নি। ওয়াশিকুর হত্যা মামলাও মাঝপথে থেমে আছে। অভিজিৎ, দীপন হত্যাকারীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইতিমধ্যে নাজিম হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ ধর্মঘটের কর্মসূিচ নিয়েছেন। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটবে আর বিচারপ্রার্থী মানুষের আকুতি নিষ্ফল রোদনে পরিণত হবে, এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এই জিঙ্গবাদী গোষ্ঠীকে এখনই শক্ত হাতে মোকাবিলা না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। নাজিম উদ্দিনের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চাই সর্বাত্মক অভিযান। তাদের শেষ আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে সরকার প্রমাণ করুক, জঙ্গিদের প্রতি তারা জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.