প্রবাসের মিথ্যা হাতছানি

সিলেটের বিয়ানীবাজারের যুবক আবদুল ওয়াহিদ মোটমাট ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেখেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে সে দেশের অভিবাসন পুলিশ। বছর খানেকের বেশি সময় কারাভোগের পর দেশে ফেরত
এলেন যখন, তখন তিনি নিঃস্ব। এমন গল্প আরও হাজারো যুবকের। প্রবাসে কর্মসংস্থান কখনো সুযোগ, কখনো কেবলই মরীচিকা। এই মরীচিকার পেছনে ছোটার আগে ভেবে দেখা দরকার নয় কি যে পথটা কি বৈধ নাকি অবৈধ? অবৈধ পথে অনিশ্চিত আশার পেছনে এত টাকা ব্যয় করার চেয়ে দেশেই উদ্যোগী হওয়ার চেষ্টা বেশি যৌক্তিক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সম্প্রতি ফেরত এসেছেন ২৭ জন বাংলাদেশি। এক যুবক ৪০ লাখ টাকা খরচ করে সাত দেশ ঘুরে, অমানবিক দশায় আটকে থেকে ফেরত এলেন। মানুষের মধ্যে কাল্পনিক উচ্চাশা তৈরি হলে এ রকমটা ঘটে। বিদেশ মানেই সোনার খনি, সেই দিন কখনোই ছিল না, এখনো নেই। পাশ্চাত্যের উন্নত অর্থনীতিগুলো যখন মন্দায় আক্রান্ত, তখন সেখানকার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া অবৈধ অভিবাসনকে কোনো দেশই স্বাগত জানায় না।
যাঁরা ৩০-৪০ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন, তাঁদের দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে সচ্ছলতা না পাওয়ার কারণ নেই। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ এক বড় অর্থনীতি, এখানে কর্মঠ ও সতর্ক হলে এবং কিছু পুঁজি থাকলে উন্নতি না করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। তবু একশ্রেণির আদম ব্যবসায়ী মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যুবকদের উচ্চাভিলাষ কাজে লাগিয়ে আখেরে তাঁদের পথে নামিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে সরকারিভাবে যেমন সচেতনতা সৃষ্টির কাজ দরকার, তেমনি দরকার কঠোর বহির্গমন নীতি। কে, কেন বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, তা খতিয়ে না দেখে কাউকেই ছাড়পত্র দেওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া যেসব এলাকায় কর্মসংস্থান কম, সেসব এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশে আলাদা পদক্ষেপও নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.