অ্যান্টিবায়োটিক ‘নেশা’ ঘরে-ঘরে by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

সামান্য জ্বর, কাশি? তাতেও অ্যান্টিবায়োটিক। কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এতেই স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে পড়ছে রোগীরা। বিভিন্ন অলিগলির দোকানিরাও এখন ডাক্তার! দোকানদাররা শুধু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই ক্ষতিসাধন করেন না, বেশির ভাগ সময় তারা অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো কোর্স না দিয়ে দুই-এক ডোজ প্রদান করেন। যেটা রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে দেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাইরের দুনিয়ায় রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ তো দূরের কথা, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির কোনো নিয়ম নেই বলেও তারা উল্লেখ করেন। অথচ আমাদের দেশে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক উদাসীন বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের হাতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সংক্রামক রোগ বেশি, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনও বেশি। কিন্তু বিশ্বে যত ওষুধ তৈরি হচ্ছে তার মাত্র নয় ভাগ কেনে উন্নয়নশীল দেশগুলো। উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি এখন অসংক্রামক ব্যাধির দিকে। উন্নত দেশগুলো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে খুব একটা আগ্রহী নয়। কাজেই বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, একদিকে যেমন আরও নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হওয়া প্রয়োজন তেমনি একই সঙ্গে সরকার ও সাধারণ মানুষের উচিত হবে অ্যান্টিবায়োটিকের সুচিন্তিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যা বলছে: গেলো বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী এবং ওষুধের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব না হলে অচিরেই খুব সাধারণ সংক্রমণ, সামান্য কাটাছেঁড়া থেকে মৃত্য হবে মানুষের। বিশ্বের ১১৪টি দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর প্রথম প্রতিবেদন দিয়েছিল সেই বছর। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট, ভাইরাস অথবা ছত্রাকজনিত কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার ঝুঁকির বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাধারণ স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তা। বিশ্বব্যাপী অনেক সংক্রমণের ঘটনাই একটি নিত্যদিনের বিষয়। নিউমোনিয়ায় সংক্রমিত হয় ফুসফুস, মূত্রনালীতে সংক্রমণ হয়, রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ ঘটে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়রিয়ার সংক্রমণ এবং যৌনসংসর্গের কারণেও বিভিন্ন যৌনরোগ সংক্রমণের বিস্তার ঘটে। বিশ্বের সর্বত্রই নিয়মিতভাবে এসব সংক্রমণ ঘটছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেসব রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে সেসব দেশে ওইসব রোগ মোকাবিলার ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে তুলা ধরা হয়। প্রতিবেদনে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও রক্তের সংক্রমণের জন্য দায়ী সাতটি আলাদা ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রোগীদের ওপর দুটি প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এগুলো আর কাজ করছে না। এদের একটি কার্বাপেনম। নিউমোনিয়া, রক্তে প্রদাহ ও নবজাতকদের দেহে প্রদাহের মতো রোগ নিরাময়ে এই অ্যান্টিবায়োটিকটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চিকিৎসকরা এ ধরনের ওষুধ বেশি ব্যবহার করায় এবং রোগীরা ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়ায় জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। মূত্রতন্ত্রের প্রদাহে যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে গত শতকের আশির দশক থেকে তা খুব কম কাজ করছিল। বর্তমানে এ রোগের ওষুধ একেবারেই অকার্যকর হয়ে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়। গনোরিয়ার মতো রোগে বছরে ১০৬ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হচ্ছেন।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে চলেছে। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এ অঞ্চলেই বাস করে। এই অঞ্চলের কিছু কিছু অংশে অ্যান্টিবায়োটিক এখনই কোনো কাজ করছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আমাদের দেশে জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অন্যতম কারণগুলোর একটি ওষুধের দোকানগুলোতে কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করা। অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ বিক্রেতারাই হয়ে ওঠেন ডাক্তার। সামান্য জ্বর সর্দিতেও কোনো বাছবিচার না করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বলেন, এটা খান ঠিক হয়ে যাবে। এটি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। দোকানদাররা শুধু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই ক্ষতিসাধন করেন না, বেশির ভাগ সময় তারা অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো কোর্স না দিয়ে দুই-এক ডোজ প্রদান করেন। যেটা রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাইরের দেশে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ তো দূরের কথা, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। অথচ আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক উদাসীন।
কেইস স্ট্যাডি: ঢাকার পলাশী বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া। গত কয়েক মাসে আগে তার স্ত্রীর টাইফয়েড জ্বর হয়। এজন্য চিকিৎসকের কাছে যান তারা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়াযী সাত দিনের অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স দেন তার স্ত্রীকে। ৫শ’ এমজির দুটি করে প্রতিদিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নির্দেশ দেন চিকিৎসক। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, তারা স্ত্রী চারদিন ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর কমে যায়। এরপর তার স্ত্রীকে জোর করেও ওষুধ খাওয়ানো যায়নি। অথচ সাত দিন খাওয়ার কথা ছিল। এখন প্রতি রাতে আবার তার স্ত্রীর জ্বর ওঠে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুমন বলেন, সচেতনতার অভাবে তার স্ত্রী  চিকিৎসকের নির্দেশ থাকার পরেও ওষুধ খায়নি। রাজধানীর মুগদাস্থ কাজী ফার্মেসির দোকানি সবুজ মিয়া বলেন, রোগীরা দোকানে এসে অনেক সময় দ্রুত রোগ সাড়ার ওষুধ চান, প্রেসক্রিপশন দেখান না। চাইলে বলেন, প্রেসক্রিপশন লাগবে না। আগে ওষুধ দেন। তখন বাধ্য হয়ে ওষুধ বিক্রি করি। অনেক সময় রোগীরা পুরো ডোজের ওষুধ নিতে রাজি হন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের আশ্রয়স্থল গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা পল্লী চিকিৎসকরা। অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে কোনো ধরনের জ্ঞান না থাকার পরও একশ্রেণির পল্লী চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লেখেন। শুধু তাই নয়, রোগীকে দ্রুত সারিয়ে তোলার জন্য কোন কোন পল্লী চিকিৎসক এক সঙ্গে কয়েক পদের অ্যান্টিবায়োটিক লিখে থাকেন। এই অ্যান্টিবায়োটিকে বিরোধী ব্যাক্টেরিয়াগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করে।
এদিকে, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বা কেনার মাধ্যমে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার জন্য অনেক সময় দায়ী রোগী বা তার অভিভাবক নিজেই। ডাক্তাররা রোগ বুঝে কয়েক দিনব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ সাত দিন বা ১৫ দিনের কোর্স কমপ্লিট করতে বলেন। কিন্তু অসচেতন রোগীরা তিন-চার দিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলে আর খান না। ফলে পরবর্তীতে ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। এভাবেই রোগীদের অসচেতনতার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারায়।
অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, প্রতিদিন যেসব রোগী তারা দেখেন তার বেশির ভাগই তুলনামূলক অনুন্নত শহর থেকে আসেন। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, পল্লী ডাক্তাররা অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়ে রোগীর ওপর মাল্টিপল ওষুধ ব্যবহার করেছেন। রোগীকে দ্রুত সুস্থ করার জন্য এক সঙ্গে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। ব্যাপারটা এমন, পল্লী চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না কিন্তু অন্যায়ভাবে দুই-তিনটা অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন, যা খেয়ে আপাতত রোগী ভালো হয়। এ ধরনের বাইরে থেকে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে আরও একটি ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়, তারা অ্যান্টিবায়োটিকের ফুল কোর্স শেষ করেন না। দেখা গেল, ডাক্তার সাত দিনের কোর্স লিখেছেন কিন্তু রোগী সেই অ্যান্টিবায়োটিকটা চার দিন খেয়ে খানিকটা সুস্থ হওয়ায় পরে আর সেবন করেননি। ফলে শরীরের ভেতরে নিস্তেক হয়ে যাওয়া রোগ জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক বিরোধী হয়ে ওঠে এবং পরে আবার সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দেয়। ফার্মেসির কর্মচারী বা মালিকই ডাক্তার হয়ে যান। এটা সত্যিই জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বিপজ্জনক। মূলত এসব কারণেই অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে এবং সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এখনই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে বলে তারা মনে করেন।
ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ত্রুটির বিষয়টি তুলে ধরে অনেক চিকিৎসকই বলেন, আমরা ডাক্তারদের একটি সমস্যা আছে। অনেক সময় দেখা যায়, যেখানে অল্প মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক বা পুরনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই কাজ হবে সেখানে রোগীকে দ্রুত আরোগ্য করার জন্য ডাক্তাররা সর্বশেষ জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন। অথচ এ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের প্রিজার্ভ করার কথা বা নির্দিষ্ট কোনো রোগে ব্যবহার করার কথা। সামান্য রোগে দ্রুত আরোগ্যের জন্য এসব অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ক্ষতিকর। এভাবেও অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারায়। কোনোক্রমেই রেজিস্টার্ড, ডাক্তার ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। ডাক্তারদের সর্বশেষ জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ব্যাপারে আরও সংযমি হতে হবে। রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স পূর্ণ করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অসুখ ভালো হয়ে গেলেও অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্রে লেখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, চিকিৎসাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক পরামর্শ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা যেমন- কী ধরনের ওষুধ পল্লী চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করতে পারবেন সে সম্পর্কে বিধিনিষেধের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো তাদের বর্ণিত মাত্রার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দেয় না বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। অ্যান্টিবায়োটিক ভবিষ্যতে ব্যবহার করার জন্য ঘরে সংরক্ষণ করা যাবে না। এতে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ একবার ব্যবহারের পর কিছু দিন গ্যাপ হয়ে গেলে সেই সিরাপের মেয়াদ দীর্ঘদিন থাকলেও তা ব্যবহার করা যাবে না।
অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি ও খাওয়া উচিত নয়। দোকানদারা কেন প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করবেন? অযাচিতভাবে ছোটখাটো রোগের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকে সেবন করলেও বড় রোগে অ্যান্টিবায়োটিককে আর কাজ করবে না। কঠিন কোনো ব্যাধি সহজে সাড়বে না। বিষয়টি নিয়ে সত্যিকার অর্থে ভাববার সময় এসেছে। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার চলতে থাকলে একসময় অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাবে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হবে মারাত্মক হুমকি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেশ কিছু কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ছে। গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার কর্তৃক অনুমাননির্ভর বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এবং ব্যবহার।
এ বিষয়ে হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। তিনি বলেন, অযাচিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এর কার্যকারিতা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথমত রোগীকে বুঝতে হবে তার যে কোনো রোগের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অথচ আমাদের দেশের জনগণ টাকা খরচের ভয়ে নিজেই যে কোনো একটা ফার্মেসিতে গিয়ে ডাক্তারি ভাব নিয়ে ওষুধ কিনে খান, যার ফলে রোগ ভালো হয় না।

No comments

Powered by Blogger.