এবার পতনের মুখে হেলমান্দ? আফগান সেনাদের সহায়তায় ব্রিটিশ–মার্কিন সেনাদল

হেলমান্দের নাদ আলি এলাকায় আফগান সেনাবাহিনীর
সদস্যদের লড়াইয়ের প্রস্তুতি। তালেবান যোদ্ধাদের হাতে
অবরুদ্ধ সেনাদের জন্য সামরিক বিমান থেকে সেখানে
খাদ্য ও অস্ত্র সরঞ্জাম ফেলা হয়েছে l এএফপি
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী সানগিন তালেবানের হাতে পতনের মুখে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য মঙ্গলবার বলেছে, পতন ঠেকাতে আফগান বাহিনীকে সহায়তায় প্রদেশটিতে সেনা পাঠিয়েছে তারা। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
এ ঘটনার আগে গত সেপ্টেম্বর মাসেই আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর কুন্দুজের আংশিক দখল করে নিয়েছিল তালেবান। তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর এক দশকের বেশি সময়ের অভিযানের প্রেক্ষাপটে সানগিনের ঘটনাকে জঙ্গি বাহিনীটির আরেকটি বড় বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, হেলমান্দের গভর্নর গত সোমবার জানান, সানগিন শহরের পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা গভর্নরের ভবন অবরুদ্ধ করেছে তালেবান। তবে তাদের হামলা প্রতিহত করেছে পুলিশ। যদিও শহরের সড়কগুলোর নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন আফগানিস্তানে সহিংস পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল। আর দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আফগান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা ‘অসম ও মিশ্র ধরনের’ বলেও মূল্যায়ন করেছিল এ দপ্তর। পেন্টাগনের এমন সতর্কতা ও মূল্যায়নের অল্পদিনের মধ্যেই তালেবানের হাতে পতনের মুখে পড়ল হেলমান্দ।
আফগানিস্তানের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, তালেবানের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার মধ্যেই সানগিন শহরের পুলিশ সদর দপ্তরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় গতকাল জোর চেষ্টা চালায় সরকারি বাহিনী। তবে কারা গোটা শহর নিয়ন্ত্রণ করছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। হেলমান্দের গভর্নর ও পুলিশ শহরটি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকার খবরকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলেও বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়।
হেলমান্দের গভর্নর মির্জা খান রহিমির বক্তব্যের উল্টো তথ্য দিয়েছেন তাঁর সহকারী মোহাম্মদ জান রাসুলেয়ার। তিনি বলেন, গত রোববার থেকে সানগিন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে তালেবান। তালেবানও বলেছে, তারা সানগিনের অধিকাংশ এলাকার দখল নিয়ে নিয়েছে এবং শহরটির প্রধান প্রশাসনিক ভবন খালি করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত পৃথক কয়েকটি খবরে বলা হয়, সানগিনের কাছের শহর গেরেশকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ারও দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তালেবান। আগেও তালেবানের হাতে কয়েকবার সানগিন শহরের পতন ঘটেছে।
হেলমান্দ তালেবানের পতনের মুখে—এ খবর ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য বলেছে, প্রদেশটিতে তারা অল্পসংখ্যক সেনার একটি দল পাঠিয়েছে। লন্ডন টাইমস পত্রিকার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, ব্রিটিশ বিশেষ বিমানবাহিনীর (এসএএস) ৩০ সদস্যের ও মার্কিন বিশেষ বাহিনীর ৬০ সদস্যের একটি দল হেলমান্দে পাঠানো হয়েছে। সানগিনের পতন ঠেকানোর চেষ্টারত আফগান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করবে দলটি। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, তাদের সেনাদল সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নেবে না। এটি বৃহত্তর ন্যাটো বাহিনীর একটি অংশ। তারা আফগান সরকারি বাহিনীকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে গত বছরই যুদ্ধাভিযানের সমাপ্তি টানে যুক্তরাজ্য। তবে আফগান সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রায় ৪৫০ ব্রিটিশ সেনা এখনো দেশটিতে অবস্থান করছে। আফগান সরকারি বাহিনীকে সহায়তা দিতে দেশটিতে বর্তমানে ১২ হাজারের মতো বিদেশি সেনা অবস্থান করছে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ আফিম চাষের অন্যতম কেন্দ্রভূমি হেলমান্দ প্রদেশ। বহু দিন ধরেই দেশটিতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হচ্ছে প্রদেশটি থেকে। অত্যন্ত সহিংসতাপ্রবণ প্রদেশ হেলমান্দের নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েক বছর ধরেই প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায় আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সেনারা। তালেবানের সঙ্গে লড়াইয়ে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে কয়েক শ ব্রিটিশ সেনাসহ অন্তত ৯০০ বহুজাতিক সেনা।

No comments

Powered by Blogger.