কথার পিঠে কথা, রাজনৈতিক by সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক

বিজয়ের মাস চলছে। বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে বলতেই হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার তথা স্বাধীন অস্তিত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে শুরু করেছে ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমরা আজ এ অবস্থানে এসেছি। সারা বছরই কেউ-না-কেউ কোনো-না-কোনো পত্রিকায় বা টকশো বা সেমিনারে দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধারা, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে একটু বেশি করেন। কলামলেখক ও সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান গত ২৫ নভেম্বর সুন্দর একটি কলাম লিখেছিলেন ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায়। এক বছর পরও ওই কলামের বক্তব্য থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এবং নিজের মতামত যুক্ত করে আজকের কলামটি উপস্থাপন করছি একটু ভিন্ন স্টাইলে।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করা প্রয়োজন
পীর হাবিব : ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মতো কঠিন এবং রাজনীতির মতো দুর্বোধ্য বিষয় মোকাবেলা করেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ছোটখাটো বিষয়ের সমস্যা সমাধানেও যখন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়, তখন নেতৃত্বের সঙ্কট উন্মোচিত হয়।’ আমার মন্তব্য : আগামী দিনের জন্য নেতৃত্ব প্রস্তুত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বাংলাদেশের সংবিধানের মাধ্যমে এবং রেওয়াজের মাধ্যমেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। এর সুফলের তুলনায় কুফল বহু গুণ বেশি। সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন, ইতোমধ্যে সংবিধান কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো করা হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বার্থের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ মাথায় রেখে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।
দলীয়করণ বন্ধ করা প্রয়োজন
পীর হাবিব : ‘দেশে দলীয়করণের প্রতিযোগিতা প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা ও সম্মানের জায়গা সরিয়ে দিয়েছে। ... নিয়োগবাণিজ্য বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ স্বীকৃত হয়েছে।’ আমার মন্তব্য : জনাব এইচটি ইমাম হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। কিছু দিন পূর্বে তিনি ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে যে কথাগুলো বলেছেন, সে কথাগুলো যেকোনো সচেতন নাগরিককেই উৎকণ্ঠিত করতে বাধ্য। বাংলাদেশের এমন কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা সংস্থা নেই যেখানে একান্তভাবেই আওয়ামী লীগের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চাকরি দেয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর বাহিনী বা বিভাগগুলোতেও এই কাজ করা হয়েছে বলেই মানুষ বিশ্বাস করে। ওই বিশ্বাসের সমর্থন পাওয়া গেল এইচটি ইমামের কথা থেকে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষকে সরকারি চাকরি দেয়ার কারণেই গত বছর ৫ জানুয়ারি অতি ন্যক্কারজনকভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। এতবড় একটা বেনিফিট বা লাভ পাওয়ার পর, কী কারণে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দলীয়করণ বন্ধ করবে বা কমিয়ে দেবে সেটা বোধগম্য নয়। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ মেয়াদে দলীয়করণ করেছেন এটা সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়। তবে বিগত সাত বছর ধরে সেটা সীমাহীনভাবে চলছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এতবড় ভার বহন করতে পারবে কি না, এটা কঠিন প্রশ্ন।
দুর্নীতির ডালাপালা
পীর হাবিব : ‘দুর্নীতি দিনে দিনে বহু বেড়েছে।’ আমার মন্তব্য : দুর্নীতি এখন যে স্তরে আছে, সেই স্তরে একদিনে পৌঁছেনি। ১৯৭২ থেকে শুরু করে, প্রতিটি বছর, প্রতিটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সরকারের মেয়াদেই, প্রতি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি বিভিন্ন মাত্রা অর্জন করেছে। তবে বিগত ছয়-সাত বছর ধরে দুর্নীতি বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কথাবার্তা ও কর্ম প্রত্যক্ষভাবেই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, যারা নিজেরা দুর্নীতি করেননি, তাদের অপরাধ হচ্ছে, দায়িত্বে অবহেলা। আজ থেকে ছয়-সাত বছর আগের শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, চার বছর আগের হলমার্ক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ইত্যাদির দায়িত্ব কে নেবে এটা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী প্রশ্ন। বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকা ‘মানবজমিন’ ১০ জানুয়ারি ২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনের শিরোনামেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এক বছরেই পাচার ৭৬ হাজার কোটি টাকা’।ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। জিএফআই সাত বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে, তা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে তা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে এ অর্থ পাচার হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের সব নাগরিক অন্ধ বা বধির এবং চেতনাবিহীন হয়ে গেছে অথবা তাদের স্মৃতিশক্তি ও পর্যবেক্ষণ শক্তি লোপ পেয়েছে এরূপ কল্পনা করলে, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা ভুল করবেন।
রাজনীতিতে সহনশীলতা বনাম প্রতিহিংসা
পীর হাবিব : ‘রাজনীতিতে সহনশীলতার উল্টো পথে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে প্রতিহিংসা। গুম, খুন মানুষের জীবনকে নিরাপত্তাহীন করেছে।’ আমার মন্তব্য : রাজনীতিতে সহনশীলতা অপরিহার্য। সহনশীলতার অন্তত দু’টি আঙ্গিক আছে। যথা : কর্মে সহনশীলতা এবং মুখের বাক্য-বিনিময়ে সহনশীলতা। সাধারণভাবে যারা দেশ ও রাষ্ট্র চালান তারাই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হন। অতএব, জ্যেষ্ঠতম নেতা প্রধানমন্ত্রীই সবার আগে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হওয়ার কথা। কিন্তু অঙ্কের মতো জরিপ করে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে অবশ্যই বলা যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী ঘন ঘন বিরোধী দলের প্রতি ও বিরোধীদলীয় রাজনীতির নেতৃত্বের প্রতি অত্যন্ত অসহনশীল ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। কর্মের সহনশীলতা প্রসঙ্গে আমার মন্তব্য, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতি সহনশীল হওয়া রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক। অপর পক্ষে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন (একটি বা একাধিক) এর ভেতরে যে আক্রমণাত্মক পরিবেশ, সেটা অন্য কাউকে সহনশীল হতে উৎসাহিত করে না। বরং অন্যদেরও উৎসাহিত করে আক্রমণাত্মক হতে। বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিহিংসাপরায়ণ- এ কথা বহু লোক বলছেন। কাউকে-না-কাউকে প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বহু লোক বলছেন, আগামীতে যদি ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হবে। এই চিন্তার ধারাবাহিকতায় অনেকেই বলছেন, ২০ দলীয় জোট যদি অগ্রিম ঘোষণা দেয় যে, তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবে না, তাহলে বর্তমানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ঠাণ্ডা মাথায় নিজেদের ক্ষমতার বাইরে থাকার সময়ের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কিছুটা হলেও নিশ্চিত হয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক চিন্তা করতে পারে। আমার নিবেদন, শুভ কাজ যথাশীঘ্র শুরু করাই ভালো। পারলে ২০১৫ সালের বিজয় দিবসের পর থেকেই শুরু হোক; প্রতিহিংসার বদলে জাতীয় ভিত্তিতে মায়া-মমতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
বাংলাদেশে মাদকের আগ্রাসন
পীর হাবিব : ‘ইয়াবাসহ মাদকের আগ্রাসন একেকটি পরিবারকেই নয়, দেশের একটি প্রজন্মকে অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।’ আমার মন্তব্য : মাদকের আগ্রাসন নতুন নয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আছে। এই মুহূর্তে মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে বাঁচানোর জন্য এই অধিদফতর কোনো অবস্থাতেই যথেষ্ট উপযুক্ত, যথেষ্ট দক্ষ, যথেষ্ট আগ্রহী ও যথেষ্ট ক্ষমতাবান নয়। মাদক এখন একটি জাতীয় সমস্যা। মাদকের সমস্যা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে এমপিউটেশন প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবেটিস রোগীর হাতে সংক্রমণ এবং ঘা হয়েছে, চার-পাঁচটি আঙুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হাতের কব্জি দুর্বল হয়ে গেছেÑ এ অবস্থায় হাতের কনুইয়ের নিচে কেটে ফেলতে হবে। মাদক সমস্যার মতোই অন্য একটি সমস্যা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছি। কিছু দিন ধরে সোনা চোরাচালান প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। খবর পড়ি আর চিন্তা করি। দেশের মানুষ খবর পড়েন এবং চিন্তা করেন। কোনো সমাধানের কথাবার্তা পত্রিকায় দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ বছর খানেক আগে একটি চোরাচালান ধরা পড়ার পর সেটার পিঠে পিঠে সূত্র ধরে আগাতে আগাতে দেখা গেল, মিডিয়ার মতে, এই অপকর্মটিতে বাংলাদেশ বিমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা আছে। যেখানে ঘরের ভেতরেই শত্রু, সেখানে বাইরের শত্রুর প্রয়োজন নেই। মাদক প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মাদক বাংলাদেশকে শেষ করে দেবে। যারা মাদকের ব্যবসা করে, তারা টাকা অর্জনের জন্য মাদক ও ইয়াবার চোরাকারবার করে। আমার অনুভূতি বা মূল্যায়ন অনেকটা এ রকম। মোট ১২ থেকে ২০ জনের জাতীয় পর্যায়ের একটি সিন্ডিকেট পুরো বাংলাদেশে ইয়াবার চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাদের অধীনে ১০০ থেকে ১৫০ জন উপ-নিয়ন্ত্রক আছে। এসব উপ-নিয়ন্ত্রকের অধীনে হাজার থেকে দেড় হাজার সহকারী নিয়ন্ত্রক রয়েছে। সহকারী নিয়ন্ত্রকদের নিচে ১০ থেকে ১২ হাজার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী সক্রিয়। দেশব্যাপী আনা-নেয়ার জন্য লাখ থেকে দেড় লাখ বহনকারী বা কুরিয়ার আছে, যারা অন্যান্য পেশায় জড়িত থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ী ধরা পড়ে। বড় জোর, সহকারী নিয়ন্ত্রক ধরা পড়ে দু’একজন। এর উপরের স্তরের লোকেরা এ পর্যন্ত ধরা পড়েছে বলে কোনো দিন শুনিনি। মিডিয়ার রিপোর্ট মোতাবেক, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বহুলালোচিত একজন রাজনীতিবিদ মাদকের ব্যবসার ক্ষেত্রে ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেন। আমার এ মন্তব্য শুধু এই ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য নয় বরং সর্বজনীনভাবেই প্রযোজ্য। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা ব্যতীত মাদকের ব্যবসা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাসীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের প্রভাব বা সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিতভাবেই এই মুহূর্তেও আছে। তবে যেহেতু কোনো সরকারি বাহিনী বা কোনো সাংবাদিক এরূপ গভীরে অনুসন্ধান করেন না, সেহেতু ওই ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। কেউ যদি বেশি অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে তার পরিণতি হয়তো খারাপ হবে। যদি কেউ এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়, তাহলে তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র ওই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায় না। এই অনুচ্ছেদ শেষ করতে চাই একটি কথা বলে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভূখণ্ড যেমন বঙ্গোপসাগরের পানির নিচে ডুবে যেতে পারে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে, তেমনি সারা জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা, মেধা ও কর্মক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাদক তথা ইয়াবার কারণে। একজন মানুষ যদি যক্ষ্মা বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং তার চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে সে ধীরে ধীরে মারা যাবে। অনুরূপ মাদকের কারণে পুরো জাতি আক্রান্ত এবং অসুস্থ। দু’চারটি মিষ্টি কথা, দু’চারটি ক্লিনিকের বিজ্ঞাপন, দু’চারটি টকশোতে কিছু নসিহত কোনো মতেই মাদকের বা ইয়াবার আক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারবে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাদক আগ্রাসন তথা ইয়াবা আক্রমণ যারা পরিচালনা করছেন, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত এবং বিদেশে থাকেন।
কল্যাণের লক্ষ্যে পরিশীলিত রাজনীতি
কলাম শেষ করতে চাই সম্মানিত পাঠকের কাছ থেকে শুভেচ্ছা কামনা করে। কেন, তার বিনীত ব্যাখ্যা পরবর্তী লাইনগুলো। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হলো ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করতে হলে পরিশীলিত রাজনীতিবিদ, পরিশীলিত চিন্তাবিদ, পরিশীলিত আমলা, পরিশীলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিশীলিত বিনিয়োগকারী এবং পরিশীলিত শ্রমজীবী প্রয়োজন। তবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থাৎ সবার আগে প্রয়োজন পরিশীলিত রাজনীতিবিদ। কারণ, সর্বশেষ বিচারে রাজনীতিবিদেরাই দেশ পরিচালনার জন্য দায়ী। ২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর নিজে নাম লিখিয়েছিলাম একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে। সেই থেকে চেষ্টা করছি প্রচার করতে, পরিবেশন করতে একটি আহ্বান ও একটি প্রয়োজনীয়তা। সেটি হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশের মেধাবী ও সাহসী ব্যক্তিগণকে এবং তরুণ সম্প্রদায়কে রাজনীতিবিমুখ হতে দেয়া যাবে না। অপর দিকে, রাজনীতির পঙ্কিলতা ও দুর্গন্ধ তরুণ সম্প্রদায়কে দূরে ঠেলে দেয়। অতএব, প্রবীণদেরই দায়িত্ব উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। ওই সংগ্রামে লিপ্ত আছি নিজের অতি সীমিত শক্তিতে, সীমিত সংখ্যক বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষীর সহযোগিতায়। নতুন দলটির বয়স আট বছর হলো। কিছু না হোক, শুভেচ্ছা অবশ্যই কাম্য।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

No comments

Powered by Blogger.