ইবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাইদুর রহমান বাবু নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয় প ৃ। কমিটি গঠন, টেন্ডার এবং শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুরে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজু গ্রুপের কর্মীদের মাঝে এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত আরও আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সূত্রমতে, গতকাল দুপুর ২টায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্য সাবেক প্রো-ভিসি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. কামাল উদ্দীন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে ভিসি অফিসে যান। তিনি ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারকে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্য চাপ দেন। একই দাবিতে সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজু গ্রুপের কর্মী জুয়েল রানা হালিম ও ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী ভিসি অফিসে যায়। তাদের সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশী আশিকুর রহমান জাপান, তৌহিদুর রহমান হিটলারসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত যোগ দিয়ে তাদের চাকরি না হওয়া পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বোর্ড না করার জন্য ভিসিকে হুমকি দেয়। অপরদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাস নিয়োগ বোর্ড করার জন্য ভিসিকে অনুরোধ করে। এ সময় তারা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মী শিশির ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ ভিসি অফিসে প্রবেশ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায়, হাতাহাতির একপর্যায়ে শিশির ইসলাম বাবু তার অস্ত্রধারী নোমানের ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে সহসভাপতি গ্রুপের কর্মী আরাফাতের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিতে থাকে। এতে আরাফাতের সহকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে শিশির ইসলাম বাবু পুলিশের সামনেই গুলি ছুড়তে থাকে। এতে সাইদুর রহমান বাবু নামের মিজু গ্রুপের এক কর্মী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে মিজু গ্রুপের নেতাকর্মীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে তাদের দলীয় টেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়। এ সময় সহকারী প্রক্টর আলতাফ হোসেন আহতদের উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে আহতরা হলেন, সভাপতি গ্রুপের শিশির ইসলাম বাবু, কামরুজ্জামান সাগর (ফলিত পদার্থ-২০১৩-১৪), নোমান রবিন (ব্যবস্থাপনা-২০১১-১২), আতাউর রহমান (কম্পিউটার সায়েন্স-২০০৯-১০), রাজু আহমেদ, সহসভাপতি গ্রুপের জুয়েল রানা হালিম (বাংলা বিভাগ-২০০৯-১০), আইন বিভাগের ২০১-১৪ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত, অনিক, জুবায়ের প্রমুখ। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের পর সভাপতি গ্রুপ দলীয় টেন্ট ও সহসভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এবিষয়ে সহসভাপতি গ্রুপের কর্মী জুয়েল রানা হালিম বলেন, আমরা কিছু দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে সভাপতির ক্যাডার শিশির ইসলাম বাবু প্রকাশ্যে আমাদের নেতাকর্মীদের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে গুলি ছুড়ে আমাদের কর্মীকে আহত করেছে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে বানচাল করার জন্য কিছু বহিরাগত ও ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয়দানকারী দুর্বৃত্ত ভিসি অফিসে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আমার নেতাকর্মীরা বাধা দিয়েছে। প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রশাসন সজাগ আছে। ক্যাম্পাসের সামগ্রিক অবস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.