বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য

দ্বিপক্ষীয় সমস্যা যে কেবল সংশ্লিষ্ট দুটি দেশের মধ্যেই সীমিত থাকে না, তার প্রমাণ বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পণ্যের সহজ প্রবেশাধিকার-বিষয়ক প্রস্তাবিত চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েও সই হতে না পারা। কাঠমান্ডু পোস্ট নেপালের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে, সমঝোতা অনুযায়ী, অক্টোবরের মাঝামাঝি সচিব পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশটির পুরো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঢাকায় এসে চুক্তি করতে পারছে না। উল্লেখ্য, নেপালের নতুন সংবিধান নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ভারত ও নেপালের মধ্যকার সড়ক বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভূমিবেষ্টিত দেশটিকে বিকল্প পথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চুক্তিটি সই হলে বাংলাদেশে নেপালের ১০৮টি পণ্য এবং নেপালে বাংলাদেশের ৫০টি পণ্য শুল্ক-সুবিধা পাবে এবং তাতে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। নেপালের রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে যে কেবল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তিটি আটকে আছে তা-ই নয়,
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে যে চার দেশীয় মোটরযান ও পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ার কথা, তাও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে ভারতকেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কাঠমান্ডু মনে করে, তাদের ‘অবরুদ্ধ’ হওয়ার পেছনে ভারতের হাত আছে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। চার দেশীয় মোটরযান ও পণ্য পরিবহন চুক্তিরও অন্যতম লক্ষ্যও এটি। কিন্তু যেখানে পণ্য পরিবহনের অনিশ্চয়তাই কাটছে না, সেখানে বাণিজ্য কিংবা অর্থনৈতিক সহযোগিতা কীভাবে বাড়বে? নেপাল-ভারত সীমান্ত সড়ক বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার বাণিজ্যিক লেনদেনও বিরাট ঝুঁকিতে পড়েছে। কেননা, দুটি দেশের পণ্য আনা–নেওয়া করতে হয় ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্য দিয়েই। এর একমাত্র বিকল্প বিমানপথে পণ্য পরিবহনের ব্যয় অনেক বেশি। নেপালে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দ্রুত অবসান ঘটুক, চুক্তি সইয়ের বাধা দূর হোক—এটাই সময়ের দাবি।

No comments

Powered by Blogger.