সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না বাংলাদেশ

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী মুসলিম দেশগুলোর জোটে বাংলাদেশ যোগ দিলেও সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মূলত রিয়াদে প্রস্তাবিত সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্রের সাথে গোয়েন্দা তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিমিয় করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ছাড়া বিশ্বের কোথাও লড়াই করতে সৈন্য পাঠায় না। বহু বছর ধরে সরকার নির্বিশেষে বাংলাদেশ এ নীতি অনুসরণ করে আসছে। এর আগে ইয়েমেনে শিয়াপন্থী হাউসি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। এ ছাড়া আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটেও যোগ দেয়নি বাংলাদেশ। ইরাকে অভিযান চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রামসফেল্ড ঢাকায় এসে সৈন্য পাঠাতে সরকারপ্রধানকে অনুরোধ জানালেও বাংলাদেশ এ নীতি থেকে বিচ্যুত হয়নি।
সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান গত সোমবার সন্ত্রাসবিরোধী ৩৪টি মুসলিম দেশের জোট গঠনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘কেবল আইএস নয়, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর ও আফগানিস্তানে যেকোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে লক্ষ্যবস্তু করে জোটভুক্ত দেশগুলো একসাথে কাজ করবে। স্থানীয় আইন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় সামরিক অভিযান পরিচালিত হবে।’ বাংলাদেশ জানায়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থী মতবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যন্ত্রপাতি, তথ্য, ডাটা প্রভৃতি দিয়ে সহায়তা দেবে সরকার।
এসব প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল জুবাইর মঙ্গলবার প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চরমপন্থী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে জোটের সদস্যরা তথ্যবিনিময় এবং প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ও সৈন্য সরবরাহ করবে।
জোটের অন্যতম শক্তিশালী দেশ তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বে সামরিক জোট গঠনের বিষয়টি এখন আলোচনায় নেই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াও সৌদি নেতৃত্বে সামরিক জোটে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেছে, তারা বর্বরতা নয়, বরং নমনীয় পন্থায় সিরিয়া-ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকে দমন করতে চায়। পাকিস্তান জোটে অংশ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাদের ভূমিকা কী হবে তা রিয়াদ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানার পরই দেশটি সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, প্রাথমিক আলোচনায় সৌদি আরব আমাদের যে ধারণা দিয়েছে তা হচ্ছে এটা যুদ্ধ করার সামরিক জোট নয়। এটি মূলত গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের একটি কেন্দ্র হবে। এ জোটের সাথে যুদ্ধের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.