চীনে ম্যাসাজ পার্লারে সব বয়সীদের সমাগম by দীন ইসলাম

বাংলাদেশীরা মাসাজ পার্লারের কথা শুনলে শিউরে উঠেন। অনেকে জাত চলে যাওয়ার ভয়ে এনিয়ে কথা বাড়াতে চান না। বলে উঠেন নানা কটু কথা। যেন ম্যাসাজ পার্লারে গেলে ইজ্জত সম্মান সবই চলে যায়। এমন একটা ভাব। কিন্তু চীনে মাসাজ পার্লারগুলোর পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন। পরিবারের সবাই মিলে দলবেঁধে মাসাজ করতে যান। যেন উৎসবের আমেজ। নারী কর্মীদের দিয়ে পরিচালিত মাসাজ পার্লারে রয়েছে নানা ব্যবস্থা। বেইজিং ও সাংহাইয়ের বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে স্থাপিত এসব ম্যাসাজ পার্লারের সামনে তরুণীদের সেজেগুঁজে বসে থাকতে দেখা যায়। কেউ সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে ম্যাসাজ করার আহ্বান জানিয়ে চাইনিজ ভাষায় বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন তারা। কেউবা তাদের তৈরিকৃত ব্রুশিয়ার সামনে এগিয়ে দেন। চাইনিজ ভাষায় তাদের প্রতিষ্ঠানের মাসাজের গুণাগুণ সম্পর্কে বলেন। মাসাজ প্রতিষ্ঠানের ব্রুশিয়ারে ঘণ্টাভিত্তিক বিভিন্ন মাসাজের রেট লেখা রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ম্যাসাজের রেট বিভিন্ন ধরনের। ফুট ম্যাসাজ ঘণ্টায় চীনের মুদ্রায় ৮০ ইউয়েন (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০০০ টাকা), ফিস ম্যাসাজ ঘণ্টায় ৭০ ইউয়েন  (বাংলাদেশি টাকায় ৮৫০ টাকা)। বেইজিংয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি আসাদ জানান, থাইল্যান্ডের মেয়েদের মতো নোংরামিতে অভ্যস্ত নন চাইনিজ মেয়েরা। কাস্টমার না পেলে জোরাজুরি নেই। সাংহাইতে বিভিন্ন এলাকায় ম্যাসাজ পার্লারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুট মাসাজ, ফিস ম্যাসাজ ও অয়েল ম্যাসাজসহ বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজ করে থাকেন এসব পার্লারের কর্মীরা। কর্মীদের সবাই নারী। নারী হলেও ওই সব পার্লারে পুরুষদের ভিড় বেশি দেখা যায়। তবে মাসাজ পার্লারে রাতে বেশি ভিড় দেখা যায়। চীনের সরকারি ছুটির দিন রোববারে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। একাধিক চাইনিজের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ম্যাসাজকে তারা জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে মনে করে থাকেন। চুল কাটার পাশাপাশি মাসাজও মানুষের জন্য প্রয়োজন বলে তাদের বিশ্বাস। সাংহাইয়ের এক অভিজাত এলাকায় ফেয়রি ম্যাসাজ পার্লারের অবস্থান। ওই পার্লারে ম্যাসাজ করতে আসা বো চাও দোভাষীর সহায়তায় মানবজমিনের এ প্রতিবেদককে বলেন, সপ্তাহে দুই দিন অয়েল ম্যাসাজ না করলে ভাল লাগে না। শরীর ব্যথা লাগে। ম্যাসাজ করার পর কিছুটা শান্তিতে ঘুমানো যায়। আমি একা নই, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় করে মাসাজ পার্লারে আসি। তিনি জানান, চীনের বাসিন্দারা ম্যাসাজ করতে খুব পছন্দ করেন। ছেলেরা আয়েশি হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। বেইজিংয়ের একটি ম্যাসাজ পার্লারে কথা হয় চাও চ্যাং নামে এক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, চীনের নাগরিকরা একটু আয়েশি জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফুরসত পেলেই ম্যাসাজ পার্লারে ছোটেন তরুণরা।
এদিকে বিভিন্ন মাসাজ পার্লারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্পেশাল মাসাজের ব্যবস্থা রয়েছে ওই সব পার্লারগুলোতে। এজন্য রেটও একটু বেশি। কিন্তু ওই মাসাজের দিকে ভ্রমণকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আগ্রহ বেশি থাকে। স্পেশাল মাসাজ নিয়ে চীনের নাগরিকদের খুব বেশি আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.