দুনিয়া ঘুরতে চেয়েছিলেন সিজার তাবেলা

ঢাকায় সোমবার দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাবেলা ছিলেন একজন পশুচিকিৎসক। তাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। জানা গেছে, তিনি বিভিন্ন দরিদ্র দেশে গৃহপালিত পশুর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করার উপায় নিয়ে শিক্ষা দিতেন। গত আগস্টে তিনি বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করতে ইতালি ত্যাগ করেন। অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী সিজার সবসময় দুনিয়াকে আবিষ্কার করার নেশায় ঘুরে বেড়াতে চাইতেন। নিজের চাকরির কারণেই সে ইচ্ছা পূরণের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। বহু দেশে ঘুরেছেন, সাক্ষাৎ পেয়েছেন মহান সব মানুষের। ইতালির অন্যতম প্রাচীন পত্রিকা লা স্টা¤পায় তার স¤পর্কে একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
নিজের জীবনের দর্শন স¤পর্কে তিনি বলেছিলেন, এখানে আমার সময় খুব কম। তাই এ জীবন আমি যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক উপায়ে উপভোগ করতে চাই। আমি আমাকে জানতে চাই। নিজেদের উদ্দেশ্য স¤পর্কে জানতে চাই। এটা এত সহজ নয়। ৫১ বছর বয়সী এ পশু চিকিৎসকের জন্ম ইতালির মিলানে। কিন্তু পরে তিনি চলে যান ইতালির পূর্বাঞ্চলীয় রাভেন্না অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিক অঞ্চল রোমাগনায়। সেখানেই তিনি কৃষিকাজ ও পশুপালন শেখেন।
ভ্রমণ ছাড়াও তার প্রিয় কাজ ছিল, পড়া, সাঁতার, হাঁটা, ইয়োগা। আগ্রহ ছিল ভালো খাবার, ওয়াইনের প্রতি। এছাড়া গান, বাইরে রাত কাটানো, মানুষের সঙ্গে কথা বলা এবং নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করাই ছিল তার পছন্দের কাজ। তিনি নিজেকে একজন ‘খোলামন ও স্মিতহাসির অধিকারী’ বলে বর্ণনা করেছেন। ঠিক একই ধরনের বর্ণনা বিবিসি’র কাছে দিয়েছিলেন ঢাকার গুলশানে তার ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাপক। এছাড়া, তার স্বাস্থ্যসচেতনতা ও বাইরে থেকে খাবারদাবার কিনে আনার কথাও বলেছিলেন তিনি। নিজের করা কোন অসাধারণ কাজটি স¤পর্কে সিজার লিখেছেন, এক সন্তানের পিতা হওয়া। নিজের চাকরিসূত্রে বহু দেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে তার। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে লিখেছেন, আমি আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, কেনিয়া, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, রোমানিয়া, রাশিয়া, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান ও ইয়েমেনে থেকেছি।
২০০০ সালে নিজের স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে থাকতে রাভেগনা অঙ্গরাজ্যের ক্যাসোলা ভ্যালসেনিওতে চলে যান। সেখানে একটি খামারও কিনেন তিনি। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর তিনি খামার ভাড়া দিয়ে দেন। এরপরই শুরু হয় তার বিশ্বযাত্রা। এ সময় বহু উন্নয়নশীল দেশে তিনি পশু পালনের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে ৫ সদস্যের একটি দলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.