নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদেশি কূটনীতিকেরা: প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা

ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলার হত্যাকাণ্ডের জেরে বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, বিভিন্ন দূতাবাস থেকে রেড অ্যালার্ট জারির পরই বিএনপির এক নেতা জোর গলায় কথা বলছেন। এখন তো সন্দেহ হয় যে, উনাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না। আমি দেশে ফিরে সে ব্যবস্থাও করব। বিরোধী জোটের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করতে চায়, তারাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে। দেশে একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী মানুষ পুড়িয়ে মারে। মানুষ হত্যা করে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়- এমন কিছু লোক তো বাংলাদেশে রয়েছে। তারা তো চাইবেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সেই শ্রেণীর লোকদেরই কর্মকাণ্ড এগুলো। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনজীবনে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি। তবে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তেমন ঘটনা এই আমেরিকাতেও ঘটছে। বাংলাদেশে আদৌ কোন বিরোধী দল আছে কিনা- এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদীয় রীতি অনুযায়ী যারা জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে বসছেন- তারাই সত্যিকারের বিরোধী দল। তবে আমাদের দেশে আরেকটি দল আছে, যারা নির্বাচনে যায়নি। নির্বাচনের পথ ছেড়ে দিয়ে যারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করেছে তারা রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তারা জঙ্গি দল। ২০১৯ সালের আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না- এ প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগাম নির্বাচন কেন? আমরা যে উন্নয়ন করছি এটি পছন্দ হচ্ছে না? হ্যাঁ, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন পছন্দ করবে না তারাই আগাম নির্বাচনের জন্যে চিৎকার করবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং মশিউর রহমান, জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপ, এফবিসিসিআই সভাপতি মতলুব আহমদ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমডিজি বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০কে একটি সম্মিলিত যাত্রা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনসহ সকল উৎস থেকে আমাদেরকে সম্পদ সংগ্রহ করার প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ওডিএ’র লক্ষ্য পূরণ করতে শুরু থেকেই খুবই সমস্যা হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এমডিজি ও এসডিজি’র উপর এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ৭০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এমজিডি অর্র্জনের মতো এসডিজি’ও অর্জন করে বাংলাদেশ আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই যাত্রায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, কৃষি, জ্বালানি ও পরিবহনের মতো সেক্টরগুলোতে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডের রাজা উইলিয়াম আলেক্সান্ডার, বেনিন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট বোনি ইয়াই, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফ্যান এল ফেভেন, সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মোগেনস লেকেটোফট, ইউএনডিপি’র প্রশাসক মিস হেলেন ক্লার্ক, ইউএন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধি গায়ান চন্দ্র আচারিয়া এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত মাহমুদ মহিউদ্দিন বক্তব্য রাখেন। -মানবজমিন
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদেশি কূটনীতিকেরা
প্রথম আলো- আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকেরা। মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার ও কূটনৈতিক কোরের ডিন রবার্ট গিবসনের বাসায় এক বৈঠকে কূটনীতিকেরা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা খুব শিগগির বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইবেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার পর গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে ঐচ্ছিক ছুটি দেওয়া হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় আমেরিকান ক্লাব। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও গতকাল বন্ধ ছিল।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো ভ্রমণসংক্রান্ত বার্তা হালনাগাদ করেছে মার্কিন দূতাবাস। এতে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চলাফেরা সীমিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর যুক্তরাজ্য গতকাল তাদের ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করে বলেছে, ঢাকায় ইতালির নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকার কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও বিদেশিদের ক্লাব গতকাল বন্ধ ছিল।
ঢাকার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কমিউনিটি আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় তাদের একটি অনুষ্ঠান (গ্লিটার পার্টি) স্থগিত করেছে। একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ৪০০ অতিথি অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কমিউনিটি ঢাকায় গ্লিটার পার্টি করে আসছে। এবার নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন দূতাবাস থেকে তাদের নাগরিকদের ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় এটি স্থগিত করা হয়েছে।
ওই পাঁচ তারকা হোটেল কর্তৃপক্ষও অনুষ্ঠানটি স্থগিত হওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
গতকাল সকালে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকায় কর্মরত প্রায় সব দেশের কূটনৈতিকেরা অংশ নেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ও তুরস্কের নতুন রাষ্ট্রদূতের সম্মানে চা–চক্র হিসেবে এ বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিসরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে আমরা কূটনৈতিক কোরের ডিনকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি লিখতে অনুরোধ করেছি। ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইতালির নাগরিক হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে তার আসল কারণ কী, তা জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই সরকারের কাছে আমরা ব্রিফিং শুনতে চাই। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মিসরের রাষ্ট্রদূত বলেন, এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী ওই আলোচনার প্রায় শেষের দিকে পৌঁছান ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক।
সকালের ওই বৈঠকের পর দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) ম. খুরশেদ আলমের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু। তাঁরা আসন্ন বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় পিয়েরে মায়াদু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ব্রিফিংয়ের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর এবার কানাডা তাদের ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করেছে। গতকাল কানাডা হাইকমিশনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বার্তার কথা উল্লেখ করেছে। তাতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষে পশ্চিমা স্বার্থে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য তথ্যের বরাত দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এবং ওই হামলা নির্বিচারে চলতে পারে। সন্ত্রাসী হামলা যেকোনো সময় ঘটতে পারে এবং বিদেশি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটকেরা চলাচল করে এমন জায়গা হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ভ্রমণবিষয়ক বার্তা হালনাগাদ করার আগে পশ্চিমা একটি দেশ গত সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছিল। তারা এও জানায় যে ভ্রমণবিষয়ক বার্তাগুলো ওই সব দেশের রাজধানী থেকে হালনাগাদ করা হয়।
তাবেলা সিজারকে হত্যায় শোক ও নিন্দা জানিয়ে গতকাল ব্রাসেলসে ইইউর সদর দপ্তর থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে ইইউর মুখপাত্র বলেন, ওই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.