‘ফ্লোরে থাকছি, ঘুমাইছি, কেউ খোঁজ নেয়নি’

হজ শেষে দেশে ফিরছেন হাজিরা। স্বজনের দেখা
পেয়ে তাই আপ্লুত। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায়
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: সাহাদাত পারভেজ
‘ফ্লোরে থাকছি, ফ্লোরে ঘুমাইছি। কেউ খোঁজ নেয়নি। বাড়ি ভাড়া ছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হাজিদের আর কিছুই ভালো ছিল না।’ —কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ বিমানে সৌদি আরব থেকে ফেরা হাজি ইয়াছিন আরাফাত। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয় হওয়ায় তাঁর মতো অনেক হাজিকে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা জেদ্দা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি ২০১৮ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন চার শতাধিক হাজি। তাঁদের কয়েকজনের মুখেই শোনা গেল নানান দুর্ভোগের কথা।
ইয়াছিন আরাফাত নামে একজন হাজি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হাজিদের বাড়ি ছিল হারাম শরিফের কাছে। বাড়িও ভালো ছিল। শুধু এই সুবিধাটুকু ছিল, আর সবকিছু বাজে। ১৮ ঘণ্টা বিমানবন্দরে ছিলাম। খাবার তো দেয় নাই, এক বোতল পানিও পাই নাই।’
মো. মোসলেহ উদ্দিন নামে কক্সবাজারের আরেক জন হাজি জেদ্দা বিমানবন্দরে তাঁদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের ভিডিওচিত্র নিয়ে এসেছেন। ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ভিআইপি হাজিদের বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা অগ্রাধিকার দেওয়ায় সাধারণ হাজিরা তাঁর সঙ্গে বাগ বিতণ্ডা করছেন। এ সময় তাঁদের বিমানের ওই কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, ‘১০-১২ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। সবাই আগে যায়, সরকারি হাজিরা কেন পিছে পড়বে। আপনি ভিআইপি, নন-ভিআইপি কন। নো ভিআইপি, নো ভিআইপি।’
মোসলেহ উদ্দিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের হাজিরাই অবহেলিত। শিডিউল বিপর্যয়ে বিমানের এত দেরি হয়েছে যে, সবাই ফ্লোরে বসে ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এই হাতের ওপর একজন হাজি মারা গেছেন। তাঁরে আমি ইহরামের কাপড় দিয়ে বাতাস দিছি। পানি দিছি। কিন্তু বাঁচাইতে পারি নাই। আর সৌদি পুলিশ পা দিয়ে লাশ সরাইছে। এত অসম্মান! ভাই বাংলাদেশের মানুষ খুবই অবহেলিত।’
শাহজাহান খান নামে এক হাজি বলেন, ‘জেদ্দা বিমানের ভেতরে জায়গা নাই। বিমানবন্দরের বাইরের জায়গায় থাকছি। ফ্লোরে, ঘুমাইছি। এত গরম! আমরা তো আল্লাহর মেহমান। অথচ আমাদের কোনো মূল্যায়ন নাই। কোনো ডাক্তার নাই। আমার পাশে তো একজন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।’
জহিরুল ইসলাম নামে আরেক হাজি বলেন, ‘বাংলাদেশের হাজিরা জেদ্দায় মানবেতর জীবনযাপন করতাছে। পানি নাই, খাবার নাই। তারপরেও আসতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ।’
এদিকে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসা হাজিদের তেমন ফ্লাইট বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি। আরিফুল ইসলাম ও নাদিম আহমেদ নামে এ ফ্লাইটের দুজন হাজি বলেন, এক ঘণ্টার মতো তাঁদের দেরি হয়েছে। থাকা কিংবা খাওয়ায় কোনো সমস্যা হয়নি।
আজ সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট আসে। এর একটি দুপুর সাড়ে ১২টায়। অন্যটি সন্ধ্যা ছয়টায়। এ ছাড়া বাংলাদেশি হাজিদের নিয়ে ঢাকায় এসেছে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের তিনটি ফ্লাইট।

No comments

Powered by Blogger.