সিজার হত্যা: দফায় দফায় বৈঠক কোন ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ

গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশে অবস্থান করা বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে সারা দেশে বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজধানী ঢাকায় বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি। গতকাল সকালে সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি এক সভা করেছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সভায় ডিএমপি কমিশনার বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেন। গুলশান-বনানীর কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ডিএমপির অন্যান্য ক্রাইম জোনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গতকালের এই সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারভিশন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার থেকে সকল যুগ্ম কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনারেরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এজন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন পুলিশের পক্ষ থেকে সেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার তিন দিন পার হলেও এ পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ক্লু পাওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে তারা ভাল সংবাদ দিতে পারবেন। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে ঘটনা তদন্তের সহায়তায় দুটি আলাদা কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, গুলশানে ইতালীয় নাগরিক খুন হওয়ার বিষয়টি তদন্তে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছে ডিএমপি। যে কোনও মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সভায় ডিএমপি কমিশনার ‘দৃশ্যমান পুলিশিংয়ে’র দিকে জোর দিতে বলেছেন। তার ভাষ্য, যে স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ওই এলাকার আশপাশে পুলিশের পেট্রল পার্টি থাকলে খুনের মতো এই ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। এজন্য রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ফুট পেট্রল, মোটরবাইক পেট্রল, ভেহিকেল পেট্রল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকায় সন্দেহভাজন যে কোনও ব্যক্তিকেই তল্লাশির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে একাধিক আরোহী থাকলেই তাদের তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা সূত্র জানায়, ডিএমপির আট ক্রাইম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারদের যার যার এলাকার বিদেশী এনজিও, ক্লাব, স্কুল বা বিদেশীরা থাকেন এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেসব স্থানে গিয়ে বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলে তা জানার চেষ্টা করবেন। সভা সূত্র জানায়, কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে গুলশান ক্রাইম জোনের পাশাপাশি বিশেষ করে উত্তরা ক্রাইম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে সতর্ক থাকতে বলেছেন কমিশনার। এই এলাকায় অসংখ্য বিদেশী নাগরিক অবস্থান করেন। একই সঙ্গে বিদেশী নাগরিকরা কে কোথায় যাতায়াত করছেন এবং তাদের কাছে কারা যাতায়াত করছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাও নজরদারির মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি চেকপোস্ট কয়েকগুণ বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাধিক আরোহীসহ কোনও মোটরসাইকেল চেকিং ছাড়া চেকপোস্ট অতিক্রম করতে পারবে না। চেকপোস্ট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বলা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার চেকপোস্টসহ রাতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের চেস্ট গার্ড (বুলেট প্রুফ ভেস্ট) পরিহিত অবস্থায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির আট ক্রাইম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারদের তার এডিসি ও এসিদের এলাকা ভাগ করে দিয়ে কঠোরভাবে সুপারভিশন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট বন্ধ থাকে তা খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো এবং অন্ধকার বা ক্রাইম হতে পারে এমন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে টহল বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, যেসব এলাকায় সিসিটিভি রয়েছে তা সঠিকভাবে কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে তদারক করা ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোকে আশপাশের রাস্তা কাভার করাতে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্রাফিক পুলিশ শুধু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবে তা নয়, আশপাশের অপরাধ কর্মকাণ্ডের ওপরও চোখ রাখতে হবে। কারও চোখেই সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আলোচনায় ইতালিয়ান নাগরিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টির রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যদি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস জড়িত থাকে তাহলে আরও এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের দিকে সবার দৃষ্টি ফেরাতে বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়। একারণে হুমকিপ্রাপ্ত ব্লগারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
সিসি টিভি ফুটেজ নিরীক্ষা চলছে: হত্যার কয়েক দিন আগ থেকেই ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজারকে অনুসরণ করেছিল কিলাররা। কোথায়, কখন হত্যা করা হবে, হত্যার পর কিভাবে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবে এই ছক তাদের তৈরি করা ছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারেই নিরাপত্তা বেষ্টিত কূটনৈতিক পাড়া গুলশানে হত্যা করা হয় সিজারকে। কিলারদের শনাক্ত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতাধীন গুলশান এলাকা। সিসি ক্যামেরাকে অন্যতম অবলম্বন করে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম গতকাল পর্যন্ত সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। গুলশান এলাকার সাতটি স্থানের সিসি টিভির ফুটেজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটি মোটরসাইকেলকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত করছে ডিবি। দুটি মোটরসাইকেলের আরোহীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ৯০ নম্বর সড়কে সিজারকে হত্যার পর ৮৩ নম্বর সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায় কিলাররা। ওই সড়কে রয়েছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস। গোয়েন্দাদের মতে ৮৩ নম্বর হয়ে গেলেও বেশিদূর তারা যায়নি। কিছুদূর গিয়েই পশ্চিমে ৮৯ নম্বর সড়ক ঢুকেছে তারা। ওই সড়ক হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই গুলশানের প্রধান সড়ক দিয়ে পালিয়ে গেছে কিলাররা। গোয়েন্দা সূত্রমতে, ৮৩ নম্বর সড়কের দূতাবাসগুলোর সামনের সিসি টিভির ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে এতে ওই  সময়ে মোটরসাইকেলের কোন দৃশ্য নেই। ঘটনাস্থল থেকে ওই সড়কে আসার পথে প্রথমেই সৌদি দূতাবাস। ঘটনার পরই দূতাবাসের সিসি টিভির ক্যামেরার ফুটেজ ও ঘটনাস্থল সংলগ্ন এক্সিম ব্যাংক ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিবি। এক্সিম ব্যাংক ভবনের ফুটেজে সড়কের দৃশ্যগুলো স্পষ্ট না। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ৮৩ নম্বর হয়ে ৮৯ সড়কে কোন সিসি টিভি নেই। যদিও গত ১৩ই মে ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় গুলশান, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সিসি টিভি নেই বিষয়টি জেনেই কিলাররা হয়তো ওই সড়ক দিয়ে পালিয়ে গেছে। এমনকি ওই সময়ে সড়কবাতি বন্ধের বিষয়টিও রহস্যজনক বলে মনে করছেন তারা। এখন গুলশানের প্রবেশ ও বাহিরের সড়কে স্থাপন করা সাতটি স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে গুরুত্বের সঙ্গে নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘটনার পর সাড়ে ৬টার দিকে গুলশান-২ এর মোড়ে স্থাপিত ক্যামেরায় অনেকগুলো মোটরসাইকেলের দৃশ্য রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মোটরসাইকেলকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত করছে গোয়েন্দাদের একটি দল। দুটি মোটরসাইকেলে কালো রঙের শার্ট বা টি-শার্ট পরোহিত দুইজনকে দেখা গেছে। এর একটি মোটরসাইকেলেই তিনজন থাকলে অন্যটিতে ছিলেন দুজন। তবে মোটরসাইকেলের নম্বরটি অস্পষ্ট বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও নতুনবাজার, ইউএন ব্রিজ, স্যুটিং ক্লাব, গুলশান-বনানী সংযোগ ব্রিজ, খেয়াঘাট ও গুলশান ব্রিজে স্থাপিত সিসি টিভির ফুটেজ গুরুত্বের সঙ্গে নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুল আলম রাসেল জানান, ঘটনাস্থল হয়ে ৮৩ নম্বর সড়কের সৌদি দূতাবাসের আগ পর্যন্ত কোন সিসি ক্যামেরা নেই। যে কারণে একটু বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে। ফুটেজ ছাড়াও সিজারের ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। দুটি মোটরসাইকেলের আরোহীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যার পর একটি মোটরসাইকেলে করে কিলাররা পালিয়ে যায়। ওই মোটরসাইকেল ও আরোহীদের শনাক্ত করতে একাধিক মোটরসাইকেল তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থলের আশপাশে কোন সিসি ক্যামেরা না থাকায় এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে বেগ পোহাতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। এ বিষয়ে গুলশান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে গুলশান, বারিধারা, নিকেতন এলাকায় ১০৮টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরা প্রয়োজন আরও সাড়ে ৫শ’। যে কারণে ভেতরের সড়কগুলোতে তা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। এই সিসি টিভিগুলো নিয়মিত মনিটরিং করে গুলশান থানা পুলিশ। গতকাল সরজমিনে থানায় গিয়ে দেখা গেছে সিসি টিভি মনিটরিং করছেন এএসআই জসিম। দেখা গেছে, গুলশান-২ এর মোড়ে ১২টি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু দুটি ক্যামেরা রয়েছে বিকল অবস্থায়। পুলিশের গুলশান জোনের এসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গুলশান, বারিধারা, নিকেতন এলাকায় ১০৮টি ক্যামেরার মধ্যে ডিটেকটিভ ক্যামেরা রয়েছে ২৪টি। অন্যগুলো লং ভিউ। ডিটেকটিভ ক্যামেরাগুলো গাড়ির নম্বর পর্যন্ত ধারণ করে। এমনকি ব্ল্যাকলিস্টে থাকা নম্বর দেখলেই সংকেত প্রেরণ করে মনিটরিং কক্ষে। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই এসব ক্যামেরায় কোন না কোন অপরাধী শনাক্ত করা হচ্ছে।
গতকাল বিকাল সোয়া ৪টায় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সরজমিনে ওই এলাকায় ঘুরে দেখেন। পরে তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, জাতিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একজন বিদেশীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর আন্তর্জান্তিক বিশ্বে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে এবং বাংলাদেশে অবস্থিত কয়েকটি দূতাবাস তাদের দেশের নাগাকিদের সতর্ক অবস্থা চলাচলের যে জরুরি বার্তা দিয়েছে এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এমন খুনের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম নয়। এর আগেও হয়েছিল। শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। বেনজীর আহমেদ জানান, ঘটনার পরেই মামলা করা হয়েছে। মামলাটি মূলত তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। র‌্যাব ছায়া তদন্ত করছে। মাত্র দুইদিন এই হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে এই প্রাথমিক তদন্তে অসংখ্য তথ্য উপাত্ত আমাদের কাছে এসেছে।
ইতালি নাগরিক হত্যাকাণ্ডে আইএস সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঢাকার গুলশানে ইতালীয় নাগরিক  সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএসের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গতকাল নিজ দপ্তরে ঢাকায় ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিয়ো পালমার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটা আইএসের কর্ম নয়। ইতালিও এ ঘটনায় আইএসের সম্পৃক্ততার কোন আলামত দেখছে না। তিনি বলেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত ওই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তার সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলাপ হয়েছে। অনেকগুলো সন্দেহ উনারা আমাদের জানিয়েছেন, আমরাও বলেছি। আমাদের কথার সঙ্গে তিনি একমত ছিলেন। উনি যেহেতু এনজিওতে চাকরি করতেন সেখানে পেশাগত কোন বিরোধ আছে কিনা বা অন্য কোন বিরোধ আছে কিনা এটা তারাও খতিয়ে দেখছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সব দিক বিবেচনা করে অগ্রসর হচ্ছি। ইতালিও নিজস্ব চ্যানেলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএসের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তারাও জানিয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আইএসের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে ইতালির কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। আমরা তাদের বলেছি, এদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয়। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ওই এলাকার কিছু ভিডিও ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। তবে ভিডিও ফুটেজগুলো স্পষ্ট নয়। ঘটনার সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা। ওই সময় আলো আঁধারির খেলা থাকে। সিটি করপোরেশনের সবগুলো বাতি তখনও সক্রিয় ছিল না। কয়েকটি দেশের দূতাবাসের সতর্কতা জারি ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দূতাবাসের রেড অ্যালার্ট জারি আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে সব জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.