আরোহীরা জীবিত ছিলেন ৯০ সেকেন্ড

ক্ষেপণাস্ত্র  মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ বিমানকে আঘাত করার পর ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এর যাত্রীরা। অন্যদিকে পাইলট মারা যান সঙ্গে সঙ্গেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুগত ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা ইউক্রেন থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। ক্ষেপণাস্ত্রটিও রাশিয়ায় তৈরি । এসব কথা বলা হয়েছে ওই বিমান দুর্ঘটনায় গঠিত  ডাচ সেফটি বোর্ড-এর তদন্ত রিপোর্টে। গত বছর ১৭ই জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ১৭‘কে আঘাত করে রাশিয়ায় তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র এসএ-১১ বাক। এ সময় ওই বিমানে মোট ২৯৮ আরোহী ছিলেন। ডাচ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানের ককপিট থেকে মাত্র তিন ফুট পিছন দিকে আঘাত করে। এতে সঙ্গে সঙ্গে নিহত হন ক্যাপ্টেন ও দুই ক্রু। বাকি ২৯৫ আরোহীর মধ্যে ছিলেন ১০ বৃটিশ নাহরিত ও ফ্লাইট ক্রু। এসব আরোহী ঘটনার পর ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।  বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানে একটি মৃতদেহকে দেখা গেছে অক্সিজেন মাস্ক পরিহিত। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, তারা এই মাস্ক পরার  মতো সময় পেয়েছিলেন।  এতে নিহতদের স্বজনদের মনে কষ্টের রেখা আরও গভীর হয়েছে। কারণ, তারা এতদিন মনে করতেন যে, বিমানটিতে   কিছু আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে আরোহীরা নিহত হয়েছেন। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে আরোহীরা অন্তত দেড় মিনিট বেঁচে ছিলেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাঁচার যে আকুতি সৃষ্টি হয়েছিল, বিমানের ভিতরে যে মর্মস্পর্শী দৃশ্য হয়েছিল সে সব কল্পনা করে স্বজনরা আবারো শোকাহত হচ্ছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আরোহীদের মধ্যে এ সময় কোন চেতনা কাজ করছিল না। ফলে তারা কোন টেক্সট মেসেও পাঠানোর তাগিদ অনুভব করেন নি। নিহতের এক স্বজন বলেছেন, এটা বেশির ভাগ পরিবারের কাছে মেনে নেয়া কষ্টের।  স্বজনরা কি অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হয়েছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। উল্লেখ্য, রাডার পরিচালিত বাক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অতি স্পর্শকাতর। এটি ডিজাইন করা হয়েছে ক্রজ মিসাইল, এয়ারক্রাফট, ড্রোনকে টার্গেট করে । পরিচালনা করতে প্রয়োজন দক্ষ অপারেটর । ওদিকে আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে বিমানটি যাওয়ার সময় আরোহীতে পূণৃ ওই বিমানে  কারা হামলা চালাতে পারে তা অনুসন্ধানে আলাদা একটি ক্রিমিনাল ইনকোয়ারি  চলছে। তবে জোরালোভাবে মনে করা হয় এর জন্য দায়ী রাশিয়াপন্থি ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা।  অনুসন্ধানে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। তিনি বলেছেন, এখন অপরাধীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে এবং তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিন্তু রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া জাখারোভ বলেছেন, ডাচ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে তিনি উদ্ভট হিসেবে দেখেন।  কারণ, রাশিয়া সব সময়ই সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনিয়ে ইয়াতসেনয়ুক ব্যতিক্রমী এক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিনের গোয়েন্দা প্রধান দের নির্দেশেই আকাশে ওই বিমানটিতে আঘাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন সন্দেহ নেই যে রাশিয়ার স্পেশাল সার্ভিস পরিকল্পিতভাবে ওই অভিযান চালিয়ে বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে। কারণ রাশিয়ার বাক ক্ষেপণাস্ত্র চালানো জানে শুধু রাশিয়ার প্রশিক্ষিত লোকেরাই। বিদ্রোহীরা জানে না কিভাবে বাক ক্ষেপণাস্ত্র কাজ করে।

No comments

Powered by Blogger.