সাংসদ মনজুরুল ঢাকায় গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারের পর সাংসদ মন্‌জুরুল ইসলাম।
ডিবি কার্যালয় থেকে গাইবান্ধায় নেওয়ার সময়
গত রাতে তোলা ছবি l প্রথম আলো
শিশু শাহাদাত হোসেনকে গুলি করার ১৩ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ মন্জুরুল ইসলাম। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে সাংসদকে উত্তরায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদকে গাইবান্ধার পুলিশের কাজে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই তাঁকে নিয়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছে পুলিশ।
এদিকে সাংসদ মন্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের খবরে গতকাল রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মিষ্টি বিতরণ করেছেন এলাকার মানুষ। তাঁরা সাংসদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বলে জানান সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন।
সাংসদকে গ্রেপ্তারে আর কোনো বাধা নেই—অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল এ কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন সাংসদ মন্জুরুল। এর আগে দুপুরে সাংসদকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা স্থগিত করেন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চ।
গত সোমবার হাইকোর্ট সাংসদের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তা স্থগিতের আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরে সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট সাংসদ মন্জুরুল ইসলামকে আত্মসমর্পণ করার যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা আজ (গতকাল) চেম্বার বিচারপতি স্থগিত করেছেন। এর ফলে সাংসদ মন্জুরুলকে গ্রেপ্তারে আর কোনো বাধা নেই। তাঁকে গ্রেপ্তারে আদালতের কোনো পরোয়ানারও দরকার নেই। পুলিশ তাঁকে যেখানে পাবে, সেখান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
২ অক্টোবর সাংসদ মন্জুরুলের ছোড়া গুলিতে সুন্দরগঞ্জ গোপাল চরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু শাহাদাত হোসেন (৯) আহত হয়। দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শাহাদাতের পরিবার থাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ গ্রামে। ঘটনার দিন সকালে চাচা শাহজাহান আলীর সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিল শাহাদাত। সকাল পৌনে ছয়টার দিকে বাড়ির পাশে সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কে ব্র্যাক মোড় এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংসদ মন্জুরুল ওই সড়ক দিয়ে পাজেরো চালিয়ে বামনডাঙ্গা থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে যাচ্ছিলেন। সাংসদ ব্র্যাক মোড় এলাকায় গিয়ে গাড়ি থামান এবং গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে শাহাদাতের চাচা শাহজাহানকে ডাকেন। কিন্তু শাহজাহান ভয়ে দৌড় দিলে সাংসদ ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র বের করে শাহজাহানকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়েন। দুটি গুলি শিশুটির ডান পায়ে ও একটি বাঁ পায়ে লাগে। এরপর স্থান ত্যাগ করেন সাংসদ। গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে যান। তাঁরা শাহাদাতকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, সাংসদ গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শোনার পর গুলিতে আহত শিশু শাহাদাতের বাবা ও মামলার বাদী সাজু মিয়া বলেন, ‘হামরা পুলিশোক ধন্যবাদ জানাই।’ গতকাল রাত ১১টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলের শয্যাপাশে বসে ছিলেন মা সেলিনা বেগম, বাবা সাজু মিয়া ও বড় ভাই শামীম। এ খবর জানার পর শাহাদাতের বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটেছে। এ সময় শিশুটি ঘুমিয়েছিল।
সাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামার এলাকার মানুষজন এই খবরটা টিভিত দেখিয়া হামাক ফোন দিছে। এই সময় হামরা পুরা পরিবার হাসপাতালোত আছি।’ সেলিনা বেগম বলেন, ‘এত রাইতোত এই খবরটা পায়া খুব আনন্দ নাগিল। হামার সুন্দরগঞ্জের মাইনষের আইজ খুশি নাগছে। মানুষ কইতেছিল এমপি মনে হয় অ্যারেস্ট না হইবে। পুলিশ অনেক কিছু পায়, এবার তা দেখে দিছে।’
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সাংসদকে গ্রেপ্তারের খবরে হাটবাজার ও চায়ের স্টলে উপস্থিত লোকজন আনন্দ-উল্লাস করতে থাকেন। শিশু শাহাদাতের বাড়ি গোপালচরণ গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উল্লাস করেন।
সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাংসদ গ্রেপ্তার হওয়ায় মনে হচ্ছে সত্যের জয় হয়েছে। এখন তাঁকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম বলেন, সাংসদ গ্রেপ্তার হওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাস করছেন। কারণ, তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছিল।

No comments

Powered by Blogger.