বিদেশীদের মর্যাদা অনুযায়ী নিরাপত্তা by দীন ইসলাম

বিদেশী নাগরিকদের মর্যাদা অনুযায়ী  নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশস্থ হাইকমিশন বা অ্যাম্বাসি প্রধান, বিদেশী সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের প্রথম শ্রেণীর নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশীদের মধ্যে যারা এদেশে বড় বিনিয়োগকারী, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির প্রধান তারাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন তাদের মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের বিদেশীদের মর্যাদা অনুযায়ী নিরাপত্তা পাচ্ছেন। নিজের অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে বের হলে ওই অনুযায়ী তাদেরকে অনুসরণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাধারণ বিদেশীরা নিরাপত্তার প্রয়োজন মনে করলে নিরাপত্তা চাইলেই তাদের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। তবে পদ্মা সেতুতে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের প্রকল্প এলাকার বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রায় ১১০০ বিদেশী কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ৭০০ চীনা নাগরিক। বাকিদের মধ্যে আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিক কাজ করছেন। তাদেরকে খুব বেশি কাজ না থাকলে প্রকল্প এলাকার বাইরে যেতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দূতাবাসগুলোতে কর্মরতরা খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে এখন আর বাইরে বের হন না। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিছু বিদেশী এখন নিয়মিতই আসছেন। তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই বাইরে আসছেন। বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশীর সংখ্যা দুই লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। অবৈধ বিদেশীর সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন- নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ঘানা, আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, ক্যামেরুন ও লাইবেরিয়া থেকে আসা অবৈধ নাগরিকদের অনেকে প্রায়ই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারের কাছে থাকা তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৈধ নাগরিক রয়েছে ভারতের। ৭১ হাজার ৩২ জন নাগরিক বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। এরপরই যুক্তরাজ্যের অবস্থান। তাদের ২৭ হাজার ৮৫৯ জন নাগরিক বাংলাদেশে আছেন। এ ছাড়া চীনের নয় হাজার ৪৬৬ জন, পাকিস্তানের আট হাজার ৯৪২ জন, যুক্তরাষ্ট্রের আট হাজার ৮৪ জন, জাপানের দুই হাজার ৯১৫ জন, ইতালির দুই হাজার ৫৯৫ জনসহ ২২৫টি দেশের দুই লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে বিদেশীদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে বিপত্তি তৈরি হয়েছে। বৈধভাবে অবস্থানকারীদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা ও কর্মস্থল সরকারের কাছে থাকলেও অবৈধভাবে যারা আছেন তাদের সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। ফলে অবৈধদের ঠিকভাবে নিরাপত্তা দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে বেসরকারি খাতের কোন প্রতিষ্ঠান যদি কোন বিদেশী নাগরিককে নিয়োগ দিতে চায় তাহলে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আগেই আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বাধ্যতামূলক। সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ প্রতিষ্ঠানে বিদেশী কর্মচারীর সংখ্যা শতকরা পাঁচ ভাগের বেশি হতে পারবে না। এমন সব নিয়ম থাকলেও ওয়ার্ক পারমিট নেয়ার ক্ষেত্রে এসব জটিলতায় যেতে পছন্দ করেন না বিদেশী নাগরিকরা। এ কারণে ভ্রমণ ভিসা নিয়েই তারা বাংলাদেশে আসেন। এরপর এখানে চাকরি বা ব্যবসা- বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন করেন না। এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বেশি শঙ্কার কারণে সরকার চাইছে ২৭ ও ২৮শে অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ‘বুড্ডিস্ট সার্কিট ট্যুরিজম’- শিরোনামের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সটি সফলভাবে শেষ করতে। এজন্য চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সরকার আশা করছে, এসব দেশের পর্যটন মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা কনফারেন্সটিতে অংশ নেবে। এটা করতে পারলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলে মনে করছে সরকারের বিভিন্ন মহল। এজন্য রাত দিন প্রস্তুতি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.