ঘুষের অভিযোগ, জাতিসংঘে অস্বস্তি

জন অ্যাশ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনের সভাপতি জন অ্যাশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এখনো কানাঘুষা চলছে। ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের দ্বারপ্রান্তে এসে এমন একটি ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব ও কর্মকর্তারা বিব্রতকর সমালোচনার মুখে পড়েছেন।  মার্কিন বিচার বিভাগের ম্যানহাটনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম কৌঁসুলি প্রীত ভারারার করা মামলায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ক্যারিবীয় দেশ এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের সভাপতি থাকার সময় চীনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ লাখ ডলারের ঘুষ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসরত জন অ্যাশ ইতিমধ্যে তাঁর কূটনৈতিক নিরাপত্তা (ইমিউনিটি) হারিয়েছেন। এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন তাঁর (অ্যাশ) বিরুদ্ধে করা মামলায় মার্কিন কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এই মামলা এমন এক সময়ে তথ্যমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে, যখন জাতিসংঘ তার ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের আয়োজন করছে। গত মাসে প্রায় ১৬০ জন বিশ্বনেতার উপস্থিতিতে পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে বিশ্বসংস্থার নতুন ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ ঘোষিত হয়েছে। এই সময়ে জাতিসংঘের সাফল্য নিয়ে আলোচনার জায়গায় সংস্থার অভ্যন্তরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় মহাসচিব বান কি মুনও পড়েছেন বিব্রতকর এক পরিস্থিতিতে। প্রথম আলোকে এ কথা জানান জাতিসংঘ সচিবালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। জন অ্যাশ যে দামি ঘড়ি ও ব্যক্তিগত সফরের জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিমান ভ্রমণের টিকিট সংগ্রহ করেছেন, তাতে সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও হতবাক হয়েছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক স্বীকার করেছেন, দুর্নীতির এই অভিযোগ জাতিসংঘের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তাঁর ভাষায়, ‘মহাসচিব এ ঘটনায় ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। ব্যাপারটা তাঁকে উদ্বিগ্ন করেছে।’ জন অ্যাশ যে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, তা অনেকেরই নজরে এসেছিল। সংস্থার সাবেক উপমহাসচিব, বাংলাদেশের আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেছেন, নিজের দপ্তরে থাকার বদলে জন অ্যাশ প্রায়শই বিভিন্ন সরকারের অতিথি হিসেবে বিদেশে ভ্রমণ করতে ভালবাসতেন। তাঁর এমন অভ্যাসের সুযোগ কোনো কোনো ব্যবসায়ী গ্রহণ করে থাকলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রীত ভারারার অভিযোগ অনুসারে, জন অ্যাশ চীনের ম্যাকাওতে একটি আন্তর্জাতিকমানের সম্মেলন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিবের সমর্থন চেয়ে লবিং করছিলেন। সম্মেলন কেন্দ্রটি স্থাপনে বিনিয়োগে আগ্রহী একজন চীনা ব্যবসায়ীর অনুরোধে অ্যাশ মহাসচিবকে একটি চিঠি পাঠান। এই কাজের জন্য ২০১২ সালে তিনি ঘুষ হিসেবে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার পান। প্রীত ভারারা অবশ্য অ্যাশের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ আনেননি, সেটি তাঁর আওতার বাইরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রিনকার্ডের অধিকারী হিসেবে এই উপার্জন তাঁর আয়কর ঘোষণায় গোপন রাখা এবং এর ওপর ধার্য করা কর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জন অ্যাশের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে জন অ্যাশ ছয় বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে পারেন। স্তেফান দুজারিক জানান, অ্যাশের চিঠির কোনো জবাব দেননি মহাসচিব বান কি মুন। ম্যাকাওতে সম্মেলন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে তাঁর সমর্থনও প্রকাশ করেননি।

No comments

Powered by Blogger.