আইন মন্ত্রণালয়ের অক্ষমতা- প্রধান বিচারপতির উষ্মা বিবেচনায় নিন

অধস্তন আদালতের লোকবল নিয়ে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরিহাস হলো, সমস্যা কেবল বিচারকস্বল্পতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এমনকি বিচারকার্য পরিচালনার জন্য যে প্রশাসনিক লোকবল থাকা দরকার, তারও বিরাট আকাল চলছে। সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চিঠি চালাচালি চলছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। দেশের অধস্তন আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন আছে ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৩টি মামলা এবং বছরে গড়ে ছয় লাখ মামলা জমছে। কিন্তু বিচারকসংখ্যা তো বাড়ছেই না, এমনকি বিচারকদের অনুমোদিত পদগুলোও পূরণ করতে সরকার ঔদাসীন্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে। ১ হাজার ৬৫৫টি অনুমোদিত পদের মধ্যে এখন সাড়ে চার শতাধিক পদ শূন্য। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। পুলিশ ভেরিফিকেশনের মতো নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। সুপ্রিম কোর্ট বলছে যে একজন বিচারক নিয়োগে বর্তমানে গড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লাগছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া বিচারক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়াও সম্ভব হয় না। আবার বিচার প্রশাসনের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী।
নতুন বিচারক ও সহায়ক লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। আবার পরিহাস হলো, খোদ আইন মন্ত্রণালয়ও লোকবলের সংকটে ভুগছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরের একটি পূর্ণ মেয়াদ এবং এরপর আরও দেড় বছরের বেশি সময় যুগ্ম সচিবের পাঁচটি ও অতিরিক্ত সচিবের একটি পদ শূন্য রেখে মন্ত্রণালয় চলছে। দেশের বিচার প্রশাসনের প্রতি এ ধরনের অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
আমরা আশা করব, অধস্তন আদালত পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অবিলম্বে উল্লেখিত লোকবল সংকটের স্থায়ী সমাধানে সরকার উদ্যোগী হবে।

No comments

Powered by Blogger.