সুর পাল্টালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কাইয়ুম সন্দেহের তালিকায়

১২ ঘণ্টার মধ্যে সুর পাল্টালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুমকে শনাক্তের কথা বললেও এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, ওই বিএনপি নেতাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তারা। বুধবার সচিবালয়ে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, হাসানুল হক ইনুসহ সাত মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, “যুগান্তর পত্রিকায় একজনের নাম প্রকাশ করেছে, আমি বলেছি, সে (কাইয়ুম) সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, আমরা তাকেও সন্দেহ করছি।” তাবেলা খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের নাম মঙ্গলবার রাতে প্রথমে একাত্তর টেলিভিশনকে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। তিনি বলেন, “আমি যেটা বলেছি, সেটা রিপিট করছি- আমি একাত্তর জার্নালকে বলেছি, যুগান্তর পত্রিকায় যেটা ছাপা হয়েছে যে, কাইয়ুম বিএনপির এক ওয়ার্ড কমিশনার, আমরা তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। সে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাকে (কাইয়ুম) ছাড়াও আরও অনেকজনকে সন্দেহ করেছি, তারাও সন্দেহের তালিকায় আছে।” তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতারের পর সোমবার পুলিশ বলেছিল, এক ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনীতিবিদ রয়েছে। তবে তখন কারো নাম বলেননি তিনি। রাতে কাইয়ুমের নাম বলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাইয়ুম ঢাকা মহানগর কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় তিনি গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম। তবে তিনি এখন বিদেশে বলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ঢাকায় তাভেলা খুনের পাঁচ দিনের মধ্যে এই মাসের শুরুতে রংপুরে জাপানি নাগরকি কুনিওকে একইভাবে গুলি চালিয়ে হত্যার পর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার দাবি উঠলেও তা প্রত্যাখ্যান করেসরকার।   পুলিশ বলছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্য থেকে দুই বিদেশীকে হত্যা করা হয়। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়ে তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কবার্তা দিচ্ছে। সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন এনিয়ে কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের (বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী) যদি সিকিউরিটি কনসার্ন এতই থাকে তাহলে তারা কীভাবে অবস্থান করছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অত্যন্ত সন্তোষজনক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সংকট উতরে যাচ্ছি।” আমু বলেন, “দেশে একটি অরাজক অবস্থা সৃষ্টির জন্য ২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করছি।” তাভেলা হত্যা মামলায় গ্রেফতার একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, আরো তিনজন রিমান্ডে আছেন বলে জানান তিনি। শিল্পমন্ত্রী বলেন, হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় জিলানী নামে একজন গ্রেফতার রয়েছেন এবং আরো তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বৈঠকে আলোচিত বিষয়ে আমু বলেন, চলতি বছর ৬ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা আসা ঠেকাতে ৪৮টি চৌকি দেয়া হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে মাদক নির্মূলে অভিযানে গত ১৫ মাসে পাঁচ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। আমু বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই বৈঠকে অংশ নেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র্যা বের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ছাড়াও আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই’র মহাপরিলক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.