যে ৯ কারণে মুখের ত্বকে ভাজ পড়ে

সুন্দর কে না হতে চায়? তারুণ্য কে না ধরে রাখতে চায়? আমরা সবাই সুন্দর হতে চাই, তারুণ্য ধরে রাখতে চাই। তবে সুন্দর হওয়া মানে কিন্তু শুধু গায়ের রং ফর্সা হওয়া নয়! সুন্দর হওয়ার সম্ভবত সবচে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে সুন্দর ত্বক। আর সুন্দর ত্বক মানে ভাজহীন ত্বক, নিটোল ত্বক। দীর্ঘ জীবন পেলে একসময় আপনার ত্বকে ভাজ পড়বে, এটা ঠিক। এটা প্রাকৃতিক নিয়মেই হবে। কিন্তু তাই বলে কি আমরা ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রচেষ্টা চালাবো না? অবশ্যই চেষ্টা করবো। যদি আপনি সচেতন হন এবং দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চলেন, তবে দীর্ঘকাল আপনি ভাজহীন সুন্দর ত্বক ধরে রাখতে পারবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে: এর জন্য কী করতে হবে। কঠিন কিছু না। ত্বকের যত্নে নিয়মিত আমাদের কিছু কাজ করতে হবে এবং কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের অনেকে কথা কথায় ভুরু কুঁচকাতে পছন্দ করি। কেউ ইচ্ছায় ভুরু কোঁচকাই, কেউবা মনের অজান্তে। উভয়ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু আপনার ত্বক। ভুরু কুঁচকালে, বিশেষ করে কপালের ত্বকে ভাজ সৃষ্টি হয়। এ সাময়িক ভাজ পরবর্তী কালে স্থায়ী ভাজে পরিণত হয়। তা-ই আজ থেকে আর ভুরু কুঁচকানো নয়। আপনার প্রতিক্রিয়া অন্যভাবে প্রকাশ করুন।
বলা হয়ে থাকে, যারা হাসিখুশী থাকেন, তাদের বয়স সবসময় ১০ বছর কম মনে হয়। ভুরু কোঁচকানো হচ্ছে বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ। আমরা বিরক্তি প্রকাশ না-করে, নিজের ভেতরে রাখার চেষ্টা করি এবং হাসিখুশী ভাব বজায় রাখি। হুম, বিরক্ত হলেও তার ভুরু কুঁচকে প্রকাশ না-করতেই বলছি আমরা। এটাকে কৃত্রিম মনে হচ্ছে? হোক না! আমাদের ত্বকের সুস্বাস্থ্যের জন্য এটুকু কৃত্রিমতা মেনে নিতে চাই আমরা।
তো, অসময়ে ত্বকে ভাজ পড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে রাত জেগে কম্পিউটারে কাজ করা। রাত জাগা এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ওপরে যদি যুক্ত হয় কম্পিউটার থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মি, তাহলে তো কথাই নেই! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাত জেগে কম্পিউটারে যারা কাজ করেন, তাদের মুখের ত্বকে অসময়ে ভাজ পড়তে পারে। তাই, রাতকে ঘুম বা বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত রাখুন। দিনের বেলাটা থাকুক কাজের জন্য।
অনেকে শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না বা করার প্রয়োজন বোধ করেন না। অথচ সারা বছর ধরেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সানস্ক্রিন ছাড়া সূর্যের নিচে যাওয়া ত্বকের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। এতে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এসব ক্ষতির একটি হচ্ছে অসময়ে ত্বকে ভাঁজ পড়ে যাওয়া।
ধূমপায়ী আর মদ্যপায়ীদের মুখে অসময়ে ভাজ পড়ার আশঙ্কা বেশি। তা ছাড়া, ধূমপায়ীদের তুলনায় অধূমপায়ীদের বয়স কম মনে হয়। এটা ধূমপান না-করার সুফল। অতিরিক্ত মদ্যপান মানুষের তারুণ্যকে দ্রুত শেষ করে দেয়। যারা অতিরিক্ত মদ পান করেন, তাদের ত্বকে অসময়ে ভাজ পড়তে পারে। অতএব ধূমপান আর অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন, তারুণ্য ধরে রাখুন।
মুখের নানান ভঙ্গির মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি। যেমন, রেগে গেলে অনেক সময় আমরা চোখ-মুখ খিচিয়ে কথা বলে উঠি। এ ধরনের ভঙ্গি আমাদের ত্বকে ভাঁজ পড়তে সাহায্য করে। অতএব মুখের ভঙ্গির মাধ্যমে ভাব প্রকাশ যত কম করা যায় ততই ভালো। এমনকি অতিরিক্ত অট্টহাসিও ত্বকে ভাঁজ সৃষ্টি করতে পারে। তাই অট্টহাসির পরিবর্তে মৃদু হাসিই কাম্য বেশি।
শরীরচর্চার সুফলের কথা তো বহুবার আমাদের অনুষ্ঠানেই বলা হয়েছে। তো, যারা তারুণ্য ধরে রাখতে চান সম্ভাব্য দীর্ঘতম সময় পর্যন্ত এবং চান ভাঁজহীন সুন্দর ত্বক, তাদের উচিত নিয়মিত শরীরচর্চা করা। শরীরচর্চায় যে ঘাম সৃষ্টি হয়, তা আমাদের ত্বকের জন্য কল্যাণকর। কারণ, এ ঘাম ত্বকের নিচের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে দেয়।
নিজেকে একটি বেশি সুন্দর দেখাতে আমরা অনেকেই মেকআপের আশ্রয় নেই। মেক আপ করায় কোনো সমস্যা নেই। তবে, মনে রাখতে হবে, মেক আপ একটা কৃত্রিম ব্যবস্থা। মেক আপে আমরা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকি। তাই সময়মতো ভালো করে মেক আপ তুলে নেয়া এবং মুখ ভালো করে পরিস্কার করা জরুরি। তা নাহলে, আপনার ত্বকে অসময়ে ভাঁজ পড়ে যাবে।
আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসের সাথেও ত্বকে অসময়ে ভাজ পড়ার সম্পর্ক আছে। যারা মশলাযুক্ত খাবার, বিশেষ করে ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য খারাপ খবর আছে। আপনাদের ত্বকে অসময়ে ভাঁজ পড়তে পারে। অতএব ঝাল খাওয়া ছেড়ে দিন বা নিদেনপক্ষে কমিয়ে দিন। আর বেশি বেশি শাক-সবজি খান। শাক-সবজি ত্বকের জন্য উপকারী।
যারা বেশি বেশি ফাস্টফুড খান, তাদের ত্বকেও অসময়ে ভাজ পড়তে পারে। অতিরিক্ত ফাস্টফুডের কারণে আজকাল অনেকেই দ্রুত মুটিয়ে যাচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন স্থুলতা রোগে। তাই আমাদের উচিত, ফাস্টফুডের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো।

No comments

Powered by Blogger.