নতুন এক পৃথিবীর ইঙ্গিত!

এই বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবীর মতো আর কোনো বসবাস উপযোগী গ্রহ কী আছে? বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছেন এর উত্তর। খোঁজ করছেন ছায়াপথের কোনায় কোনায়। পৃথিবী সদৃশ গ্রহের সন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ২০০ আলোকবর্ষ দূরে আমাদের সৌরমণ্ডলের অনুরূপ একটি সিস্টেমের খোঁজ পেয়েছেন।
গবেষকেরা দাবি করছেন, আমাদের সৌরজগতের অনুরূপ কোনো সিস্টেম অন্য কোথাও সহজে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে এবারে সৌরজগতের মতোই একটি সিস্টেমে​র খোঁজ মিলেছে যা পৃথিবী থেকে ২০০ আলোকবর্ষ দূরে। সেখানে সূর্যের মতো একটি নক্ষত্র রয়েছে যার নাম এইচআইপি ১১৯১৫। এই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতি গ্রহের মতো একটি গ্রহ আবর্তন করছে। বিশাল ভরের এই গ্রহটির সঙ্গে বৃহস্পতি গ্রহটির অনেক মিল রয়েছে। বৃহস্পতি সূর্য থেকে যতটা দূরত্বে আবর্তন করছে ওই গ্যাসীয় গ্রহটিও তার নক্ষত্র থেকে প্রায় একই দূরত্বে আবর্তন করছে। এইচআইপি ১১৯১৫ নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির যমজ গ্রহটির তিন হাজার ৬০০ দিন লাগে। বৃহস্পতির লাগে চার হাজার ৩৩০ দিন।
ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির মুখপাত্র রিচার্ড হুক বলেন, ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ মিল পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এটা খুব কাছাকাছি হওয়ায় এই আবিষ্কার অনন্য। এই মিলটি অনেক নিকটতম। সূর্যের মতো একটি বস্তুর চারপাশে বৃহস্পতির মতো একটি গ্রহের এটাই সর্বোচ্চ মিল।’
বৃহস্পতির যমজ আবিষ্কারের গুরুত্ব
গবেষকেরা বলছেন, বৃহস্পতি ঠিক স্থানে থাকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল এই গ্যাসীয় গ্রহটি আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি ও এর ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মহাকর্ষীয় শক্তির দিক থেকে বিবেচনা করলে সূর্যের পরেই রয়েছে বৃহস্পতি।
গবেষকেরা মনে করেন, সৌরজগতে গ্রহ সৃষ্টির সময় বৃহস্পতি সৌরমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে পরিষ্কার করেছিল বিশেষ করে গ্রহের কক্ষপথগুলো যেন অন্য বস্তু দিয়ে ভরে না যায় তা ঠিক করেছিল বৃহস্পতি।
শিল্পীর দৃষ্টিতে পৃথিবী সদৃশ গ্রহ। ছবি: ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি।
বৃহস্পতি সঠিক অবস্থানে থাকায় মহাকাশ থেকে ছুটে আসা গ্রহাণু বা উল্কা থেকে গ্রহকে রক্ষা করে। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, লাখো বছর আগে বড় আকারের একটি উল্কার আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতির কাছ দিয়ে যাওয়া বস্তুর পথ এর অত্যন্ত বেশি মধ্যাকর্ষণের কারণে বেঁকে যায় এবং অনেক বড় আকারের বস্তুগুলো বৃহস্পতিতে গিয়ে পড়ে।
সৌরজগতের খোঁজে
দুই দশকের বেশি সময় ধরে পৃথিবী সদৃশ গ্রহ বা এক্সোপ্লানেট খুঁজে বেড়াচ্ছেন গবেষকেরা। গবেষক হুক বলেন, শুরুতে তাঁরা ভেবেছিলেন, সৌরজগতের মতো জটিল সিস্টেম হয়তো সহজেই খুঁজে পাবেন। কিন্তু ভুল ভেবেছিলেন তাঁরা। সৌরজগতের অনুরূপ কোনো সিস্টেমের খোঁজ পাওয়ার পরিবর্তে তাঁরা একটি নক্ষত্র ও এর চারপাশে একটি বা দুটি গ্রহ অথবা নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুর্ণায়মান বড় আকারের কয়েকটি গ্রহ, এ ধরনের সিস্টেমের সন্ধান পান।
এইচআইপি ১১৯১৫ নক্ষত্রকে ঘিরে বৃহস্পতির যমজ গ্রহটির আবর্তনের ঘটনাটি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার পুরোনো আশাকে আবার নতুন করে সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মেগান বেদেল এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি লিখেছেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘সব দিক বিবেচনায় এই আবিষ্কারটি আরও নতুন নতুন সৌরজগৎ আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে সে কথাই বলে।’
গবেষক হুক বলেন, যে সব এক্সোপ্লানেট জীবনধারণের উপযোগী তা যে নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে সে ধরনের নক্ষত্র খুঁজে বের করা সহজ। এসব নক্ষত্রের কক্ষপথ দেখেও অনেক এক্সোপ্লানেটের সন্ধান মেলে। শুধু কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ থেকে চার হাজারের বেশি এ রকম এক্সোপ্লানেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে সূর্যের মতো নক্ষত্র থেকে সঠিক দূরত্বে যাতে খুব বেশি গরম বা শীতল না হয়, তরল পানিসমৃদ্ধ, বসবাস উপযোগী পরিবেশ রয়েছে এমন গ্রহের খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। তবে গবেষকেরা প্রায় আটটি এ ধরনের এক্সোপ্লানেট খুঁজে পেয়েছেন। তবে সৌরজগৎ তৈরিতে সহায়তা করে এমন নক্ষত্র ও বৃহস্পতির মতো গ্রহের মতো সিস্টেমের খোঁজ পাওয়া আরও কঠিন।’
পৃথিবী মতো কোনো গ্রহ কী আছে?
গবেষকেরা এখনো আশার কথা শোনাতে পারেননি। তাঁরা বলছেন, এইচআইপি ১১৯১৫ নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহের আবর্তন করার বিষয়টি টের পাননি। এটা টের পেতে হলে ওই গ্রহের কক্ষপথ নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যেতে হবে এবং পৃথিবী থেকে সঠিক কোন তৈরি হলে তবে তা দেখা যাবে।
গবেষকেরা বলছেন, ওই সৌরমণ্ডলে আরও এক্সোপ্লানেট বিশেষ করে পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহ থাকতে পারে। নক্ষত্র ও বৃহস্পতি জমজের মধ্যে কোনো এক মানানসই জায়গায় নিজের কক্ষপথে তা রয়েছে। গবেষক হুক বলেন, গ্রহের মতো বস্তুর উপস্থিতি সেখানে থাকতে তার ইঙ্গিত আছে কিন্তু সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই।’(সিএনএন)
শিল্পীর দৃষ্টিতে বৃহস্পতি গ্রহের অনুরূপ গ্যাসীয় গ্রহটি এইচআইপি ১১৯১৫ নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। ছবি: ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি।

No comments

Powered by Blogger.