দুই মন্ত্রীর সফরের অজুহাতে বিরোধপূর্ণ জলাশয় ভরাট

দুই মন্ত্রী আসায় লোকসমাগম হবে, এই অজুহাতে
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী
ইউপির সামনের ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাশয়টি
ভরাট করা হচ্ছে। ছবি -প্রথম আলো
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করতে আসবেন দুই মন্ত্রী। মন্ত্রীদের আগমনে সেখানে লোকসমাগম ঘটবে—এমন অজুহাত দেখিয়ে বিরোধপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, তুষখালী মৌজায় ইউপি কার্যালয়-সংলগ্ন ২৫ শতাংশ জমিতে একটি জলাশয় রয়েছে। ক্রয়সূত্রে জলাশয়ের মালিক তুষখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রয়াত আজাহার আলীর পাঁচ ছেলে। গত বুধবার থেকে ড্রেজার যন্ত্র দিয়ে জলাশয়ে বালু ফেলে ভরাট শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান হাওলাদার। জলাশয়ের পশ্চিম দিকে ইউপি কমপ্লেক্সের সামনে সুউচ্চ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। ম্যুরালের পাশে রয়েছে মন্ত্রীদের নামফলক।
শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন হাওলাদার বলেন, ১৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটবে। ইউপি কমপ্লেক্সের সামনে অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এর সামনের জলাশয়টি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাশয়ে বালু ফেলে ভরাট করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘জলাশয়ের মালিকানা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আজাহার আলী গংদের সালিস চলছে। আমরা তাঁর কাছে অঙ্গীকার করে এসেছি যদি জলাশয়ের মালিকানা আজাহার আলীর পরিবার পায়, তা হলে জমি ছেড়ে দেব। এখন শুধু মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানের জন্য বালু ভরাট করা হচ্ছে।’
আজাহার আলীর বড় ছেলে এ কে এম মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৮৫ সালে আবদুর রশিদ খলিফার কাছ থেকে জমিটি তাঁর বাবা ক্রয় করেন। এরপর তাঁরা জমির চারপাশে গাছ লাগান ও খনন করে মাছ চাষ করে আসছেন। তাঁদের পাঁচ ভাইয়ের নামে জমির নামজারি করা হয়েছে ও তাঁরা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, শাহজাহান হাওলাদার বিভিন্ন সময় জমিটি কেনার জন্য চেষ্টা করেন। জমিটি কিনতে ব্যর্থ হয়ে তিনি দুই মন্ত্রীর আগমনের অজুহাত দেখিয়ে বালু ফেলে ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। ২২ আগস্ট সালিসের পরবর্তী তারিখ। বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে জলাশয়টি ভরাট করা হচ্ছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে শাহজাহান হাওলাদার বলেন, তিনি ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক। এটি নিয়ে সালিস চলছে। আপাতত দুই মন্ত্রীর অনুষ্ঠানের সুবিধার জন্য জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ‘আমি দুই পক্ষকে বলেছি মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানের জন্য জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। এরপর সালিসে যে পক্ষ জমি পাবে, তাদের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ তিনি মন্ত্রীদের অনুষ্ঠান সফল করার জন্য জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এ কে এম মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দী হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের দুটি ঘর পুড়িয়ে দেয়। আমাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সমর্থক। মন্ত্রীদের আগমন ও অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানাই। কিন্তু মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানের নাম করে জলাশয় ভরাট করে ইউপি চেয়ারম্যান জায়গাটি দখল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।’
মঠবাড়িয়ার ইউএনও এস এম ফরিদ উদ্দিন জানান, দুই মন্ত্রীর মঠবাড়িয়ায় সফর সম্পর্কে তিনি কোনো সফরসূচি পাননি।

No comments

Powered by Blogger.