চীনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চীনের বন্দরনগরী তিয়ানজিনের একটি বাণিজ্যিক এলাকায় গত
বুধবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো
এলাকা। পোড়া কঙ্কালের মতো অবস্থা হয় বন্দরের অনেক
ভবন ও বিস্ফোরণস্থলের কাছে রাখা শত শত নতুন গাড়ির। রয়টার্স
চীনের উত্তরাঞ্চলের বন্দরনগরী তিয়ানজিনের একটি বাণিজ্যিক এলাকায় গত বুধবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুই দফায় ওই বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো এলাকা। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এঁদের মধ্যে ১২ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। আহত হয়েছেন আরও সাত শতাধিক। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।  গতকাল বৃহস্পতিবার তিয়ানজিন স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাণিজ্যিক এলাকার ওই গুদামে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ ও গ্যাস মজুত করা হতো। বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই আরও একটি বিস্ফোরণ হয়। এতে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। তিয়ানজিনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভয়ংকর এই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই ১২ জন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীসহ ৫০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০০ জন। তাঁদের মধ্যে ৬০ জনের অবস্থা গুরুতর। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সহস্রাধিক অগ্নিনির্বাপণ কর্মী গতকালও আগুন নেভানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ভবনের দরজা-জানালা উড়ে যায়। এমনকি কয়েক কিলোমিটার দূরের বহুতল ভবন থেকেও এর প্রভাব টের পাওয়া যায়। মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা যায়।
ইন্টারনেটে পোস্ট দেওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে আগুনের গোলা আকাশের দিকে ছুটে ছুটে যাচ্ছে। বিস্ফোরণে পৃথিবীর দশম বৃহত্তম এই বন্দরে নোঙর করা বেশ কয়েকটি জাহাজের অনেক কনটেইনার দেশলাইয়ের কাঠির মতো দপ করে জ্বলে ওঠে। প্রায় ১০ হাজার নতুন গাড়ি পুড়ে যায়। বন্দরের অনেক ভবন পোড়া কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে এসব ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের মাত্রা ছিল তিন টন টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুইন) বিস্ফোরকের সমান। দ্বিতীয়টি ২১ টন টিএনটির সমান। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, বড় বিস্ফোরণ দুটির পর আশপাশে আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এগুলো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ কি না, একজন আরেকজনের কাছে জিজ্ঞেস করেন। আতঙ্কিত অনেক বাসিন্দা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। এ সময় বিস্ফোরণের ফলে উড়ে আসা কাচে অনেকে রক্তাক্ত হন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা গুয়ান জিয়াং বলেন, ‘আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের ঘরের জানালা ও দরজা প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায়। প্রথমে ভেবেছিলাম, ভূমিকম্প হচ্ছে।’ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, কর্তৃপক্ষ আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে। এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.