সমঝোতা নয়, ছাত্রলীগের নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটে: প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা by আবদুর রশিদ ও আসিফুর রহমান

সমঝোতার মাধ্যমে নয়, ছাত্রলীগের পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে। কিন্তু ভোটারদের বেশির ভাগই একটি কথিত ‘সিন্ডিকেট’-এর অনুসারী হওয়ায় তাঁদের মনোনীত প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে, ভোটার তালিকা প্রকাশ না করায় প্রার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। আর ভোট কীভাবে হবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রার্থীরা প্যানেলভুক্ত, না স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেটা গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। ফলে নির্বাচনের আগের রাত পর্যন্তও ভোটাররা জানেন না, কাদের তাঁরা ভোট দেবেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী নেতৃত্ব স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে কাউন্সিলরদের (ভোটার) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া পরবর্তী নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে তিনি কিছু মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছেন। এরপর নির্বাচনের প্রক্রিয়া কেমন হবে, এ নিয়ে বিকেলে চারটায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সাবেক শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।
আজ রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। সকাল ১০টায় প্রথমে সব প্রার্থীকে নিয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন বৈঠকে বসবে। এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সভাপতি পদের ৬৪ জন প্রার্থী ও সাধারণ সম্পাদক পদের ১৪২ জনকে নিয়ে তাঁরা বৈঠকে বসবেন। তবে অনেকে না বুঝে, আবেগের বশে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমেও প্রার্থীর সংখ্যা কমে আসবে। পরে স্বল্পসংখ্যক প্রার্থীদের ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে নির্বাচন হবে।
কিন্তু এটা প্যানেলভুক্ত, না স্বতন্ত্রভাবে হবে, এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান কিছু বলেননি।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া কথিত ‘সিন্ডিকেটের’ হাতেই থেকে গেল বলে মনে করছেন এর বাইরের বিভিন্ন বলয়ের নেতারা। এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অঞ্চলভিত্তিক অন্তত সাতটি উপদল তৈরি হয়েছিল। এসব উপদলের নেতারাও গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এমনই এক নেতা, যিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা শাখার প্রায় সবগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই সিন্ডিকেটের অনুসারী। তাঁরাই নিজেদের পছন্দমতো ভোটার তালিকা জমা দিয়েছেন। এখন ভোট হলে সিন্ডিকেট-সমর্থিত প্রার্থীই জিতবেন, এটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে এখন কোনো প্রার্থী থাকবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
আরেকজন নেতা বলেন, বিগত চারটি কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির অনুসারীরা শীর্ষ পদে রয়েছেন। ফলে নির্বাচন হলেই ছাত্রলীগের ওই সাবেক সভাপতি ‘মেকানিজম’ করে তাঁর অনুসারী প্রার্থীদের জয়ী করে নিয়ে আসেন। এবারেও এর বিকল্প হবে না।
ছাত্রলীগের আজকের সম্মেলনে প্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের বর্তমান পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক জাকির হোসেন, সহসম্পাদক আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক শাহেদুজ্জামানের নাম আলোচনায় রয়েছে। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ‘সিন্ডিকেট’ থেকে সাইফুর রহমান ও জাকির হোসেনকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভবিষ্যৎ ছাত্রলীগ নেতার যোগ্যতা সম্পর্কে দলের সভানেত্রীর নির্দেশ—নেতা হতে হবে মেধাবী এবং নিয়মিত ছাত্র। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের একটি বয়স সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা ২৭ বছর। নিয়মিত শিক্ষার্থী যারা, তারাই নেতৃত্বে আসবে। যেহেতু দুই বছর নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গ্রেস পিরিয়ড তো দিতে হয়।’ তিনি এ সময় ২৯ বছর বয়স নির্ধারণ করে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বয়সের কারণে বাদ পড়া ছাত্রলীগ নেতারা আশাবাদী ছিলেন, যেহেতু দুই বছরের কমিটি চার বছর অতিক্রম করেছে, তাই বয়সের বিষয়টি নেত্রী বিবেচনা করবেন। কিন্তু এর আগের দুই বছরও ২৯ বছর থাকায় এখন নতুন করে ‘বাড়িয়ে’ ২৯ বছর করাটাকে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হিসেবে মনে করছেন নেতারা।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য মোট ২৪২ জনের মধ্যে ৩৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। তাঁদের মধ্যে বয়স ২৯ বছরের বেশি হওয়ায় বাদ পড়েছেন চারজন।

No comments

Powered by Blogger.