বাংলাভাই ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন -হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আট বছর পর এখন জানা গেল শীর্ষ জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই বিএনপি সরকারের আমলে নিরাপত্তা বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছিলেন। গত ৯ই জুলাই ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সির (এনআইএ) বরাত দিয়ে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস এই খবর দিয়েছে।
ভারতীয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি বলেছে, বাংলাদেশী সন্ত্রাসী সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই ২০০৫ সালে বাংলাদেশী নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা চরম দাবড়ানির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন জেএমবি’র নেতারা তাকে একসঙ্গে দুটি উদ্দেশ্য হাসিলে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাভাইকে নিরাপদ আত্মগোপনে রাখা এবং  নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাত-উল-মুজাহিদীন (জেএমবি)-এর ভারতীয় শাখা খুলতে তাকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে প্রেরণ করা হয়। বাংলাভাই ওই সময় পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে তিন মাস অবস্থান করেছিলেন। ভারতীয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি (এনআইএ) হিন্দুস্তান টাইমস-এর কাছে এ সপ্তাহে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাভাই পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় তিন মাস অবস্থান করেছিলেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে সংঘটিত বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে এনআইএ নয় বছর আগের বাংলাভাই বৃত্তান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাভাই মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর তিনি জেলাতেই অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় দেয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে জেএমবি বর্ধমান, নদীয়া, ঝাড়খণ্ড, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, আসাম অঞ্চলে তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। এবং এখন নিশ্চিত হওয়া গেল যে, বাংলাভাইয়ের মাধ্যমে তারা ৯ বছর আগেই এই প্রস্তুতি শুরু করেছিল। হিন্দুস্তান টাইমসের এই রিপোর্টে বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জাগ্রত মুসলিম জনতার মিলিটারি কমান্ডার ছিলেন বাংলাভাই আর এটি ছিল আল কায়েদার একটি অঙ্গ সংগঠন। তারা সবাই মিলে বাংলাদেশে একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাভাই ২০০৬ সালে তার বাংলাদেশের আত্মগোপন স্থল থেকে গ্রেপ্তার হন এবং পরের বছরই তিনি মৃত্যুদণ্ড ভোগ করেন। বাংলাভাই মুর্শিদাবাদে জেএমবি’র ব্রাঞ্চ খোলার উদ্যোক্তা হাতকাটা নাসিরুল্লাহর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে এসেছিলেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মুর্শিদাবাদেই জেএমবি তার প্রথম শাখা খুলেছিল। এই জেলার দমকলের ঘাঁটিতে অবস্থানকালে বাংলাভাই নদীয়া ও বীরভূমে অবস্থানরত জেএমবি’র অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলাভাই তাদেরকে বলেছিলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং তাদের কাজ হবে সীমান্তের জেলাগুলোতে এই ধারণা ছড়িয়ে দেয়া।’ বাংলাভাই তাদেরকে স্থানীয়ভাবে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে বন্দুক চালনা ও বিস্ফোরণ ঘটানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের উপদেশ দিয়েছিলেন। বাংলাভাই এমনকি এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন যে, আল কায়েদার নেতারা তাদেরকে সাহায্য করবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটি মাদরাসায় অভিযানকালে আমরা কিছু বইপত্র ও খাতা উদ্ধার করি। এতে দেখা যায়, প্রশ্ন এসেছে আল কায়েদা ও জেএমবি’র মধ্যে পার্থক্য কি? যারা উত্তর দিয়েছে যে, আল কায়েদার আরেক নাম জেএমবি তাদেরকে সর্বোচ্চ নম্বর দেয়া হয়েছে।’
মণিপুরে কারফিউ
উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য মণিপুরের ইম্ফলে গতকাল তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণে পারমিট প্রথা চালু করাকে কেন্দ্র করে ৫ম দিনের মতো কারফিউ বলবৎ ছিল। হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সংবাদদাতা শোভাপতি স্যামন গত ১৩ই জুলাই লিখেছেন, রাজ্যে ‘‘বহিরাগতদের’’ নিয়ন্ত্রণে পারমিট প্রথা চালু করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিক্ষোভ ও উত্তেজনায় একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র নিহত হয়। মণিপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা ‘বহিরাগত’ কথাটি বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে তাদেরসহ সকল অভিবাসীকে বোঝানো হয়ে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.